Now Reading
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও হালুম বুড়ো

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও হালুম বুড়ো

Avatar photo
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও হালুম বুড়ো

আজ একুশে ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাংলা ভাষার গুরুত্ব ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কিছু ভাবনা। হালুম বুড়োর গল্পের মাধ্যমে মাতৃভাষার মূল্য উপলব্ধি এবং বাংলা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কিছু কথোপকথন।

আজ একুশে ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস । একটা ছোট্ট কথা মনে পড়ে গেল। আপনাদের ঝরনা কলমচিকে মনে আছে? আরে সেই যে কয়েক বছর আগে আমার বাংলা শেখার গল্পটা লিখেছিল। তাই আজকের দিনে সেই গল্পটির স্মৃতিচারণ করে বাংলায় লিখছি। আর, কাকতালীয়ভাবে আজ হালুম বুড়ো আমার বাড়িতে এসেছিল। বলাই বাহুল্য, সে আমায় নতুন করে মাতৃভাষার গুরুত্বটা বুঝিয়ে দিল।

হালুম বুড়ো আমাদের পাড়ার খুদেদের মধ্যে একজন। তার আসল নামটা থাক, হালুম বুড়ো নামটাই বেশি সুন্দর। কয়েকদিন আগে শুনলাম, হালুম বুড়ো নাকি খেতে খুব ভালোবাসে। শুধু তাই নয়, সে এই খুদে বয়সে রান্না করতেও খুব পছন্দ করে। বেশ মজা লাগল শুনে। তাই আজ সকালে ওর মাকে ডেকে বললাম, “আজ হালুম বুড়ো আর ছোট হালুমকে আমার বাড়ি পাঠিয়ে দিও। আমার এখানেই খাবে।” ছোট হালুম মানে, হালুম বুড়োর ছোট ভাই।

দুপুরবেলা খাওয়া-দাওয়ার পর হালুম বুড়ো আর ছোট হালুম গল্প শোনার আবদার করল। গল্প ফাঁদায় আমি বিশেষ দক্ষ, এই নিয়ে এলাকায় আমার বেশ নামও আছে। কিন্তু হঠাৎ করে ওদের আবদার শুনে একটু হকচকিয়ে গেলাম। ভাবছিলাম কী বলব, ঠিক তখনই শিবরাম চক্রবর্তীর “ভূতের চেয়েও অদ্ভুত” গল্পটা মনে পড়ে গেল। শুরু করলাম গল্প বলা, একটু নিজের মতো রংচং মিশিয়ে। হঠাৎ হালুম বুড়ো বলে উঠল, “আরে, এ গল্প তো আমি জানি!”

আমি বললাম, “তুই জানিস? বল তো, কার লেখা?” “নামটা ভুলে গেছি… দাঁড়াও,” বলেই ছুটে পালাল হালুম বুড়ো।

কিছুক্ষণ পরেই হাতে বই নিয়ে ফিরে এল। দেখি, সত্যিই শিবরাম চক্রবর্তীর গল্পের বই। খুব ভালো লাগল, আজকের বাচ্চারাও যে শিবরাম চক্রবর্তী বা অন্যান্য বাংলা বই পড়ে। তারপর বেশ কিছুক্ষণ দুই ভাই মিলে আমার সঙ্গে গল্প করল।

আজকের এই ঘটনাটা বলার কারণ একটাই। আজকালকার দিনে বেশির ভাগ বাড়িতে বাংলা শেখানোর ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ দেখা যায় না। আমিও ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়েছি, কিন্তু ছোটবেলা থেকেই বাংলা ও ইংরেজি, দুটো ভাষাতেই বই পড়ার সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু আজকালকার মা-বাবারা যেন বাচ্চাদের এই আনন্দ থেকে বঞ্চিত করছেন।

See Also

এখানেই শেষ নয়। এখনকার বাংলা সিরিয়ালে হিন্দি গানের ছড়াছড়ি। পরিচালকদের বলতে চাই, আপনারা মারোয়ারি-গুজরাটিদের খুশি করতে পারেন, কিন্তু দর্শকদের বারবার হিন্দি গান শোনাতে হবে কেন? অনেকে বলবেন, হিন্দিও তো আমাদের দেশের ভাষা। তাদের জানিয়ে রাখা ভালো, হিন্দি আদতে ভারতীয় ভাষা নয়। হিন্দির জন্ম কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে। আসল ভাষা ছিল খাড়িবলি ও অবধি। জন বোর্থউইক গিলক্রিস্ট নামে এক স্কটিশ ভদ্রলোক হিন্দি ভাষার জন্মদাতা।

তাই, আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস -এ অনুরোধ রইল, নিজের সৃজনশীলতা ও কল্পনাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাংলা ভাষায় গান তৈরি করুন। তা না পারলে অন্তত বাংলা গান ব্যবহার করুন সিরিয়ালে। কারণ, আপনারা সমাজকে অনেকভাবে প্রভাবিত করেন। আর মা-বাবাদের বলছি, ইংরেজি অবশ্যই শেখাবেন, কারণ ইংরেজি হলো লিঙ্ক ল্যাঙ্গুয়েজ। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, বাংলা শেখানো দরকার নেই। এখন যা হচ্ছে, তাতে বাচ্চারা ঠিকমতো বাংলা বলতে পারে না, ইংরেজিও না। এর দায়ভার কিন্তু আপনাদেরই। একটু ভাবুন।

What's Your Reaction?
Excited
3
Happy
4
In Love
2
Not Sure
0
Silly
0
View Comments (0)

Leave a Reply

Your email address will not be published.


Scroll To Top