বিজয়া -র বিভ্রান্তি



Pinaki, named after Shiva's bow, carries the legacy of his…
অপ্রাসঙ্গিক ও প্রতারণাপূর্ণ কথাবার্তায় সৃষ্ট গোলযোগ নিয়ে লেখকের ব্যঙ্গাত্মক পর্যালোচনা। সমাজের অসঙ্গতি, দালালদের অবস্থা ও অসত্য প্রচারণার প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে। চিকিৎসক ও সমাজের ঘুণপোকার ভূমিকা নিয়েও রয়েছে লেখকের স্পষ্ট মতামত। বিজয়া -র অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ও অসুর নিধন প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়েছে, আর ইসলাম ও সনাতন ধর্মের সম্পর্ক নিয়ে লেখকের অবস্থান জানানো হয়েছে।
গতকাল আফিমটা একটু বেশি পরিমাণে সেবন করিয়া ফেলিয়াছিলাম। তাই গঞ্জিকা সেবন ব্যাহত হইয়াছিল। নচেৎ, বৃহলাঙ্গুলের দলের এহেন জ্ঞান কিরূপে আমার দৃষ্টি এড়াইয়া গিয়াছিল, তাহা অদ্যবধি অনুধাবিত হইতেছে না। সুধীবর, অল্প সময়ের মধ্যেই বুঝিতে পারিবেন যে আমার এরূপ ধারণার উদয় হইয়াছে কি প্রকারে।
এক অর্বাচীন, আদ্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক দালাল ও সর্বোপরি কুলাঙ্গার চাটুকারিতার গুণে গুণান্বিত ও ভিক্ষান্নে প্রতিপালিত, বর্তমান দ্রোহকালের শারদীয়ায় কিঞ্চিৎ অযাচিতভাবে এক শকুনের উৎসবে কয়েকটি অসত্য বয়ান শুনাইয়াছে। আর ইহাতেই গোল বাধিয়াছে!
আমার এই মহান দেশে আজ কোথাও ক্রীতদাস প্রথা নাই বলিয়াই আমার ধারণা। আর এই ধারণার বশবর্তী হইয়াই আমি ঈষৎ অহঙ্কারীও বটে (যদিও গর্ব এবং অহঙ্কারের প্রভেদ বুঝিতে পারিলাম না এ জীবনে)! তাই আমার কাজ (যোগ্যতায় অর্জিত, কুলাঙ্গারদের মতো চাটুকারিতায় পাওয়া না) আমি কখন ছাড়িয়া অগ্যস্ত যাত্রা করিব, তা নিতান্তই আমার ব্যক্তিগত অধিকার। কোনো রাষ্ট্র শক্তির দালালের ইহাতে হস্তক্ষেপ করার আইনানুগ ব্যবস্থা রাখিবার প্রয়োজনীয়তা রাষ্ট্র অনুভব করে নাই। ইহা অতি উৎসাহ দালালদের এক অতি পরিচিত ও প্রাচীন কেতা, যাহা তাহার আরোও নাগরিক অর্থ হরণের সহায়ক হইতেই পারে; কিয়দংশে (স্ত্রীর পদোন্নতি, চাকরির পরেও জনগণের অর্থে জীবনযাপন ইত্যাদি)। অবশ্য কেহ কেহ এই প্রকারের জুয়া চুরিকে প্রকাশ্যেই বিশেষ গুণ বলিয়া আখ্যায়িত করিয়া আহ্লাদিত হইয়া ওঠেন – আদতে ইহারাই আপনার সমাজের ঘুণপোকা – চেতনার অকাল মৃত্যুর কারণ!
কিছু অনুপ্রাণিত চাবাল আবার এক কাঠি আগাইয়া বলিতেছেন – চিকিৎসকদের পদত্যাগ করিবার এই নাটক আসলে তাদের সুচিন্তিত প্রহসন। হায়রে হায়নার দল, ইহা বুঝিবার ন্যূনতম যোগ্যতাই তাহাদের নাই যে, চিকিৎসাবিদ্যা (বৈদ্য জ্ঞান) কারোও দয়ার দান নহে, ইহা অন্তরের ডাকে উপলব্ধির অঞ্জলি! তাই, কাহারও চাকরবৃত্তি না করিয়াও চিকিৎসকরা নিজ নিজ যোগ্যতায় এই সেবা প্রদান করিবার যোগ্য – শকুনের শাপে গরুর মৃত্যু হয় না!
যখন একটু মৌতাতে ঝিম ধরিল, হঠাৎ কে এক খুঁচাইয়া বলিল “শুভ বিজয়া”, “বিজয়ার পটভূমি” ইত্যাদি! অর্ধোন্মিলিত আঁখি জোর পূর্বক টান টান করিয়া দেখিলাম বক্তব্যগুলি অপাচ্য খাদ্যের মুখ হইতে বাহির হইয়া যাওয়া দুর্গন্ধাবিষ্ট বর্জ্য! প্রথমে বলি অভয়ার মৃত্যু যাহাদের নাড়া দেয় নাই, যাহারা উৎশবে চিত্র বিচিত্র পোষাক পরিহিত অবস্থায় মনের দুর্গন্ধ ঢাকিবার অছিলায় আতর মাখিয়া নৃত্য করিল তাহাদের কাছে শুভ অশুভ একটি বর্ণের তফাৎ মাত্র, বোধহীন ও যুক্তিহীন পরোজীবি জীবনাচার! আমার মেয়ের চিরবিদায় আমার কাছে চিরকালের অশৌচ, ইহা কদাপি শুভ হইতে পারে না।
এবার বলি বিজয়ার পটভূমি আসলে জয়া ও বিজয়ার মিলন যেখানে অসুর নিধন (হত্যা নয়) হইতেছে! তাই এই পৈশাচিক সমাজে যত্রতত্র ছড়াইয়া থাকা পরিচিত ও অপরিচিত অসুরের নিধন হইলেই বিজয়া শুভ হইবে! এই মুহূর্তে শুভ বিজয়া বলিতে জিহ্বা আড়ষ্ট বোধ করিতেছে! আর সিন্দুর আদান প্রদান একটি পরিবর্তিত লোকাচার, যাহা সনাতনী মতে অশৌচের (অসুর নিধনের যজ্ঞ) পরে শৃঙ্গারের সূচক! বিজয়ের প্রতীক ও সধবার গর্বিত প্রকাশ!
সবশেষে বলি, মুসলমান ও দুর্গাপূজার যোগাযোগের যে আদেখলাপণা বর্ণিত হইতেছে তাহা দেখিয়া আমার সুচিন্তিত ও সুনির্দিষ্ট পরামর্শ এই যে, যাহারা এই সুন্দর পটভূমি রচনা করিতে চাহিতেছেন তাহারা বাঙলাদেশের ঐ গ্রামগুলোতে পৌঁছাইয়া এই মহৎ বাণীটি প্রচার করুন। এখানে ঘোমটা পড়িয়া খ্যামটা নৃত্যের প্রয়োজনীয়তা নাই।
ইসলাম শব্দের অর্থই হইল “সর্বোশক্তিমানের কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ”! আমার সনাতনী সভ্যতা আমায় শিখাইয়াছে তর্ক ও যুক্তির দ্বারা জ্ঞান আহরণ। শুধু বিশ্বাসে মিলায় বস্তু না! আমার অবতার ধারণা “হত্যা ও নারী নির্যাতনের” ভিত্তিতে বলীয়ান হইয়া গড়িয়া উঠিয়াছে এমন নহে! আমার সংস্কৃতি একাধিক বৈপরীত্যের মিলন শিখাইয়াছে, কোনো একক সর্বশ্রেষ্ঠ পথ বা মতের অনুসারী হইতে শেখায় নাই! তাই ইসলাম ও সনাতন শুভ পরিপূরক হইতেই পারে না – এই মিলনের প্রচেষ্টা ‘সোনার পাথর বাটি’ খুঁজিয়া ফিরিবার মতো!
“ইচ্ছে ছিল সোনার বাটিতে গরম দুধ ফুঁ দিয়ে খাই! কিন্তু সোনার বাটি বা পাই কোথায় আর গরম দুধই বা কোথায়? শুধু ফুঁটাই পড়ে রইল!”
বিসর্জনের স্বর শুনিলাম, শুভক্ষণ আসিল না!
What's Your Reaction?

Pinaki, named after Shiva's bow, carries the legacy of his late doctor parents. Educated at Ramakrishna Mission and Scottish Church College, he's a tech professional and writer. Politically inclined, he aspires to devote more time to learning, humbly embracing his identity: "I am one of you."