২৪ জন রাজ্যবাসীর মৃত্যুর কিছু তথ্য ও বিশ্লেষণ।
২০২৪ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে রাজ্যের জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের কারণে সরকার দাবি করেছে যে ২৪ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তা কি সত্যি ? কিছু বিশ্লেষণ ।
বিগত কয়েকদিন ধরে রাজ্যের জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন এবং কাজে যোগ না দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার দাবি করেছে যে ১২ই আগস্ট ২০২৪ থেকে ৯ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত প্রায় ২৪ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। সরকারী বিবৃতিতে জুনিয়র ডাক্তারদের অনুপস্থিতির কারণে এই মৃত্যুগুলিকে দায়ী করা হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির গভীরতা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শুধুমাত্র জুনিয়র ডাক্তারদের উপর নির্ভরশীল নয়।
জুনিয়র ডাক্তারদের বক্তব্য
জুনিয়র ডাক্তাররা তাদের প্রেস কনফারেন্সে উল্লেখ করেছেন যে, তারা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার একটি অংশ হলেও, স্বাস্থ্য পরিষেবা বজায় রাখার প্রধান দায়িত্ব সিনিয়র ডাক্তারদের উপর বর্তায়। তারা এও দাবি করেছেন যে সিনিয়র ডাক্তারদের ভূমিকা এবং উপস্থিতি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত এমন একটি সময়ে যখন জুনিয়র ডাক্তাররা কাজে নেই। বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে সিনিয়র ডাক্তাররা আগের মতোই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। বিশেষত বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে সাধারণত কোনো জুনিয়র ডাক্তার নিযুক্ত হন না, ফলে সেখানে পরিষেবায় কোনো বিঘ্ন ঘটেনি।
রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতা
সরকারের দাবি যদি সত্য হয় যে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের কারণে ২৪ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে, তাহলে এটি স্পষ্ট যে স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে সিনিয়র ডাক্তারদের সংখ্যা যথেষ্ট নয়। সিনিয়র ডাক্তারদের আরও নিয়োগ করা হলে হয়তো এই মৃত্যুগুলি এড়ানো যেত। তবে এই বিষয়ে আরও গভীর একটি সমস্যা দেখা দেয়: রাজ্য সরকারের তরফে সামগ্রিকভাবে নিয়োগের হার অত্যন্ত কম। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, এবং অন্যান্য ক্ষেত্রেও নতুন নিয়োগ প্রায় স্থগিত অবস্থায় রয়েছে। নিয়োগ সংক্রান্ত নানা দুর্নীতির অভিযোগও বারবার উঠে আসছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
পরিসংখ্যানের আলোকপাত
১০ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে “খবর ৩৬৫” নামক একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত এক মাসে প্রায় ২৪ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। (ইষ্ট ইন্ডিয়া স্টোরি এই খবরের সত্যতা যাচাই করে নি) তাদের স্বাস্থ্য দপ্তরের সূত্রে পাওয়া এই তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, কিছু মানুষ এমন প্রশ্নও তুলেছেন যে, তালিকায় উল্লিখিত হাসপাতালগুলির মধ্যে এমন হাসপাতালের নাম রয়েছে যেখানে কোনো জুনিয়র ডাক্তার নেই। তাহলে কীভাবে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিবাদের কারণে মানুষের মৃত্যু হয়েছে?। তা ছাড়া, সিনিয়র ডাক্তারদের অনুপস্থিতির সম্ভাবনা বা তাদের ভূমিকা নিয়েও পরিষ্কার কোনো তথ্য সরকার প্রকাশ করেনি।
উপসংহার
রাজ্য সরকারের এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছু প্রশ্ন ওঠে। যদি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শুধুমাত্র জুনিয়র ডাক্তারদের উপর নির্ভরশীল হয়, তবে সিনিয়র ডাক্তারদের সংখ্যা এবং তাদের কার্যকরী উপস্থিতি কীভাবে নিশ্চিত করা হচ্ছে? আবার, জুনিয়র ডাক্তারদের অনুপস্থিতির কারণে যদি পরিষেবার এত বড় ক্ষতি হয়ে থাকে, তবে স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থার ভিত্তিগত দুর্বলতাই উঠে আসে।