অভয়ার দ্রোহকাল
Pinaki, named after Shiva's bow, carries the legacy of his…
পুরুষ ও প্রকৃতির সম্পর্ক, সভ্যতার অগ্রগতি ও অবক্ষয় নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ। অভয়ার বরাভয় প্রদানের আলোকে মানব সভ্যতার ঘাত-প্রতিঘাত ও প্রকৃতি-পৌরুষের চিরন্তন টানাপোড়েনের গল্প।
ব্রহ্মান্ডের থেকে গ্রহাণু বিচ্ছিন্ন হইয়াও একে অপরের সহিত নিরবিচ্ছিন্ন সম্পর্কে আবদ্ধ রহিয়া যায়। ইহা অনুধাবন করিতে পারিলেই এতদ ক্ষুদ্র পরিসরে আপন মিলন ও বিরহের হাপিত্যেশ সংযত রাখা যাইতেই পারে। আমার আজিকার এই লেখনীটি অভয়ার বরাভয় প্রদানের আলোকেই আলোকিত করিবার প্রচেষ্টায় ব্রতী হইলাম।
পুরুষ ও প্রকৃতির রূপ আলাদা হইলেও, উহারা একে অপরের পরিপূরক। মানব সভ্যতার চলত রেখায় ইহা পূর্ণ মাত্রায় প্রকাশিত। স্মরণের গতিপথে ইহা আমার দৃষ্টি গোচর হইয়াছে যে সভ্যতার গতির স্বাভাবিকত্ব হইল ইহাই যে, প্রকৃতি পুরুষের নানাবিধ অনুভূতির ঘাত প্রতিঘাতেই নতুন সৃষ্টির সফলতা বিরাজমান।
সভ্যতার অগ্রগতি! ইহা আমার কাছে নিতান্তই বিভ্রান্তিমূলক ও সংববেদনহীন ঔদ্ধত্য বলেই প্রতিভাত হয়। সভ্যতার চলন কদাপি সরলরৈখিক নহে, বরঞ্চ ইহা চক্রাকার! অর্থাৎ ইহা সময়ের নিয়মে একটি বিন্দুতেই থাকে, কিন্তু তাহার স্পর্শক প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল! আবার এই স্পর্শক পূর্ববর্তী অপেক্ষা ভালো না মন্দ এই প্রশ্ন অবান্তর ও অর্বাচীনের কষ্ট কল্পনা! তাই সভ্যতা নিয়ত পরিবর্তনশীল, কিন্তু তাহার “অগ্রগতি” একটি অস্বচ্ছ ধারণামাত্র!
ইহা বলাই বাহুল্য যে, সভ্যতার ইতিহাসে প্রকৃতি-পুরুষের অংশগ্রহণ ও অবদান সমান সমান। কিন্তু ইদানিং এই প্রবণতা বহুল প্রচলিত যে, প্রকৃতি পুরুষ হইতে কম বলশালী – একটি গালভরা আহ্লাদিত শ্লাঘা! ভাবুন তো, প্রকৃতির ধারণ ক্ষমতা পৌরুষের চালচিত্র কি না! অথবা, প্রকৃতির গ্রহণ ক্ষমতা ব্রহ্মান্ডের পরিসর কি না! কিংবা, প্রকৃতির সৃষ্টি ঈশ্বরের করুণার সার্থক স্পর্শ কি না! প্রকৃতির ধ্বংস নটরাজের প্রলয় কি না! আসলে, প্রকৃতির রূপ লাবণ্যময়, অথচ তাই আবার ভয়াল করালরূপীনিও হইয়া যাইতে পারে! অভয়া আমাদের বরাভয় প্রদায়ীনি, কিন্তু তাহাই আবার দ্রোহকালী হইয়া উঠিল।
অভয়া কোনো একক উদাহরণ নহে, বরঞ্চ ইহা একটি আদি রসের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরম্পরা! একদা পুরুষের প্রকৃতির প্রতি অযাচিত লালসা সার্বিক অবক্ষয়ের সূচনা করিয়াছিল, যাহা পরবর্তী কালে আগ্নেয়গিরি হইতে উৎসারিত লাভা হইয়া ধ্বংসের উদগ্র লীলা সম্পন্ন করিয়া চলিতেছে।
রামায়ণের সীতা, মহাভারতের দ্রৌপদী ইত্যাদি এইসকল ঘটনায় পৌরুষের কামনার পরম্পরাই পরিলক্ষিত হইয়াছে। এতদ অসদাচরণ শুধুই এই দুই ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নহে, বিদেশের ইলিয়াড – ওডিসি ইত্যাদি রচনাতেও একইভাবে উল্লিখিত হইয়াছে। মধ্য কালীন সময়ে দেবদাসী প্রথাও সেই অবক্ষয়ের আর এক রূপভেদ। বর্তমান কালে রবীন্দ্রনাথের লেখায় এর একটি আধুনিক সংস্করণ (নষ্টনীড়, গৃহদাহ ইত্যাদি) আমার নজরে আসিয়াছে।
এই যুগ যুগান্তরের পুঞ্জীভূত আক্রোশ আজ এই দ্রোহকালে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটাইয়াছে। দ্রোহকাল মহাকালের মাহেন্দ্রক্ষণে উপস্থিত হইয়া যে নাদ সৃষ্টি করিল অভয়া তাহার মন্ত্রেই আজ উমা হইয়া উঠিল।
What's Your Reaction?
Pinaki, named after Shiva's bow, carries the legacy of his late doctor parents. Educated at Ramakrishna Mission and Scottish Church College, he's a tech professional and writer. Politically inclined, he aspires to devote more time to learning, humbly embracing his identity: "I am one of you."