Now Reading
কলকাতা বাংলা আকাদেমি সভাঘর ও একটি আবৃত্তি সন্ধ্যা

কলকাতা বাংলা আকাদেমি সভাঘর ও একটি আবৃত্তি সন্ধ্যা

Avatar photo
কলকাতা

সবাই সব কবিতা যেমন পড়ে উঠতে পারি না, সেই রকম অনেক কবি ও তাঁদের সৃষ্টি আমাদের অচেনা, অজানা। নামী ও অপরিচিত কবিদের কবিতার ডালি সাজিয়ে ধরে ছিল ‘শ্রুতি অঙ্গন’। রজত জয়ন্তী বর্ষে ফাগুনের সন্ধ্যায় ‘কলকাতা বাংলা আকাদেমি সভাঘর’ সেই সাক্ষ বহনের ভার নিলো। কলমে: রাজ কুমার মুখার্জী

দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী বলতে শহর কলকাতা  বোঝায়। নাট্যচর্চা, কাব্য চর্চা, গান, ছবি, সিনেমা – নানা রকম সৃজনশীল কর্মের কেন্দ্রবিন্দু কলকাতা। ছোট বড় নানা সংগঠন তাঁদের নিজেদের মতন করে সাংস্কৃতির চর্চা করেন, এগিয়ে নিয়ে চলেন। ‘শ্রুতি অঙ্গন’ এমনই একটি ছোট্ট সংস্থা, পথ চলতে চলতে নিজেদের অজান্তে তারা আজ পঁচিশ তম বসন্তে পা ফেলেছে।

গত ১৫ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪ কলকাতা  বাংলা একাডেমির সভা ঘরে রজত জয়ন্তী বর্ষের তৃতীয় সন্ধ্যা উদযাপন করলেন শ্রুতি অঙ্গনের ছাত্র-ছাত্রীরা। ১৭ই ফেব্রুয়ারি কবি জীবনানন্দ দাশের জন্মদিবস, ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবস, ‘আবোল-তাবোল’ এর শতবর্ষ পূর্তি এবং সদ্য প্রয়াত ছড়াকার ভবানীপ্রসাদ মজুমদারকে স্মরণ করে নির্ধারিত সময় শুরু হল ‘শ্রুতি অঙ্গন’ এর অনুষ্ঠান ‘প্রেমে অপ্রেমে আমরা’।

‘প্রেম’ ও ‘বসন্ত’ একে অপরের পরিপূরক। এ কথা স্মরণ করে সভা ঘরে প্রবেশের সময় প্রতিটি দর্শক শ্রোতাকে একটি পলাশ ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়ার মধ্যে এক অভিনবত্বের ছোঁয়া পাই।

শ্রীমতী জয়তি চ্যাটার্জীর সঞ্চালনা, উদ্বোধনী ভাষণ ও শিশু শিল্পীদ্বয়ের ‘হুঁকোমুখো হ্যাংলা’ এবং ‘গোঁফচুরি’ কবিতা আবৃত্তির মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা।

‘শ্রুতি অঙ্গন’এর ছাত্রীদের দ্বারা পরিবেশিত চন্দন নাথ, প্রতুল মুখোপাধ্যায়, মল্লিকা সেনগুপ্ত প্রভৃতি কবিদের কবিতার কোলাজ ‘মাতৃভাষার গরিমা’ ছিল প্রথম উপস্থাপন। চার সদস্যা কতৃক পরিবেশিত কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘চল্লিশের চিত্রাবলী’ বেশ ভালো।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধ ‘যাত্রা’, একক পরিবেশনা করলেন বিজয়ী বসু ভট্টাচার্য। শব্দ উচ্চারণের দিকে একটু নজর করলে ভালো করতেন। ‘ঘোড়া’ শব্দটি বলার সময় চন্দ্রবিন্দু লাগিয়ে, বারবার ‘ঘোঁড়া’ – কানে বড় লাগে। গৌতম ভূঁইয়া একক পরিবেশন করলেন ‘চেয়ার’ কবিতা। মাঝে মাঝে ‘শ’ ও ‘স’ এর তফাৎ হারিয়ে ফেলেছিলেন। কিছু কিছু শব্দের উচ্চারণ অসম্পূর্ণ। এত তাড়াহুড়ো করার কি প্রয়োজন, বুঝলাম না। একটু ধৈর্য ধরে, সামান্য যত্ন নিয়ে আবৃত্তি করলে শ্রুতি মধুর হতো।

শ্রুতি গাঙ্গুলীর স্পষ্ট উচ্চারণ ও তেজদীপ্ত আবৃত্তি দর্শক শ্রোতাকুল কে মুগ্ধ করে। রঞ্জন সেনের একক পরিবেশনা জীবনানন্দ দাশের দুটি কবিতা ‘বনলতা সেন’ ও ‘নগ্ন নির্জন হাত’ অনুষ্ঠানকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যেতে সাহায্য করে, পিন পতনে নিস্তব্ধতার নেমে আসে সমস্ত সভাঘর জুড়ে।

See Also
IMD Monsoon Forecast Says Less Rains For Assam

সুবোধ সরকার, পূর্ণেন্দু পত্রী, শ্রীজাত, মন্দাক্রান্তা সেন, পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতন কবি আবার গ্রাম বাংলার কবি সুজান মিঠি (সুজাতা মিশ্র) বাংলাদেশের বিখ্যাত শামসুর রহমান প্রভৃতি কবিদের সুনির্দিষ্ট কবিতা বাছার মধ্য দিয়ে ‘শ্রুতি অঙ্গন’ এর কর্ণধার শ্রী অলোক মুখোপাধ্যায় যে মুন্সীয়ানার পরিচয় দিয়েছেন, তাকে কুর্ণিশ জানাতেই হয়।

বিশিষ্ট অতিথি ও বর্ষীয়ান বাচিক শিল্পী সত্যপ্রিয় সরকার মহাশয়ের রম্যগল্প পাঠ বেশ মনোগ্রাহী। অতিথি শিল্পী ও দম্পতি শ্রীমতি স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায় ও শ্রী অরুময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রুতি নাটক পাঠ ‘ইচ্ছে হয়েছে’, ছোটবেলায় রেডিওতে সোনা নাটকের কথা মনে করিয়ে দেয়। স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলার মডুলেশন, যেকোন পেশাদার মঞ্চের নাট্য ব্যক্তিত্বের চাইতে কোন অংশে কম নয়। শ্রুতি নাটকের রস আস্বাদন করতে চাইলে প্রথম শর্ত চোখ বন্ধ করে শুধুই শুনে যেতে হবে। নাটকটিতে কোন শারীরিক অভিনয় থাকে না, তাই দেখার প্রয়োজনীয়তাও থাকে না। থাকে গলার অভিনয় – সেইখানেই বাজিমাত করেছেন স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায়। আবহ সংগীতে শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের যথাযথ সঙ্গত, শ্রোতা দর্শককে মুগ্ধ করে রাখে।

সবশেষে বলতে হয় সংস্থার কর্ণধার শ্রী অলোক মুখোপাধ্যায়ের কথা। অনুষ্ঠানের একদম শেষে স্বস্ত্রীক কবিতা পাঠের মধ্যে দিয়ে শুধুমাত্র অনুষ্ঠান শেষ করেননি, তিনি প্রমাণ করে দেখিয়েছেন অতি সাধারণ গৃহবধূকেও শিখিয়ে পড়িয়ে মঞ্চে দাঁড় করানো যায়। শ্রীমতি মিতা গুপ্ত ও রত্না হাইত – জ্বলন্ত উদাহরণ। এঁদের কবিতা পাঠের মধ্যে পেশাদারীত্ব নাও থাকতে পারে তবে প্রচেষ্টার কোন খামতি ছিল না। এইখানেই শ্রী মুখোপাধ্যায়ের কৃতিত্ব। নিজের ধারাকে এগিয়ে নিয়ে চলা, অনেকটা রিলে রেসে ব্যাটন অন্যের হাতে তুলে দেবার মতন ।

What's Your Reaction?
Excited
1
Happy
0
In Love
0
Not Sure
0
Silly
0
View Comments (0)

Leave a Reply

Your email address will not be published.


Scroll To Top