Now Reading
আত্মা দের আত্মকথন

আত্মা দের আত্মকথন

Avatar photo
আত্মা

একটি অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কাহিনী যেখানে লেখক শিলিগুড়ির একটি বাড়িতে নতুন ভাড়াটিয়া হিসেবে এসে আত্মা দের উপস্থিতির মুখোমুখি হন। অতৃপ্ত আত্মার আবেগ ও তার সাথে লেখকের সাহসী আলাপচারিতার সত্যি ঘটনা অবলম্বনে এই কাহিনী ।

ক’দিন ধরেই ঘুম আসছে না। সারাদিন লেখালেখির পর ঘুমোতে যাওয়ার সময় লাইটটা নিভিয়ে খাটে শুয়েই আবার উঠে পড়ছি। কি যে একটা অস্বস্তি ঠিক বোঝানো যাচ্ছে না। একটা অট্টহাসি, কখনো ধুপ ধাপ শব্দ, কখনো রান্নাঘরে বাসন পড়ার আওয়াজ, বাড়ির সামনে কুকুরের অদ্ভুত চিৎকার- সবটা মিলিয়ে একটা অস্বস্তিকর থমথমে পরিস্থিতি।
চাকরির সূত্রে কলকাতা থেকে নর্থ বেঙ্গলে এসেছি। শিলিগুড়িতে একটি বাড়ি তে নতুন ভাড়া এসেছি। প্রথম দুদিন অতটা বুঝতে পারিনি আজকে নিয়ে তৃতীয় দিন-
গতকাল সোশ্যাল সাইট টা রাত্রে বেলা খাটে বসে ঘাটাঘাটি করছি! হঠাৎ মনে হল আমার একদম পাশে কেউ একটা দাঁড়িয়ে, পায়ে খসখস আওয়াজ করছে, হঠাৎ করেই একটু ঘাবড়ে গেছি তারপর মনের ভুল ভেবে অতটা পাত্তা দিইনি। সারাদিন অফিসের কাজ নতুন বাড়িতে শিফট হওয়ার কারণে কিছু গোচ গাছ বাকি থাকায় সেগুলো সব সেরে বড্ড ক্লান্ত অনুভব করায় শুয়ে পড়ি ব্যাপারটাকে অতটা পাত্তা দিইনি।
আজ তৃতীয় দিন- ঘরে আমি ছাড়া আর কেউ এই বাড়িতে থাকে না সুতরাং এ মতো অবস্থায় এই পরিস্থিতিতে কিছুই মাথায় আসছে না- ভয়ে ঘুমোতেও পারছি না, এদিকে ঘুমে চোখ লেগে আসছে আর বুঝতে পারছি আমার খাটের সামনে কেউ দাঁড়িয়ে বিভিন্নভাবে আমাকে ভয় দেখিয়ে যাচ্ছে, কখনো খাট নাড়াচ্ছে আবার কখনো খাটের উপর উঠে নাচছে- সবটা মিলিয়ে একটা অব্যক্তকর দম বন্ধ করা থমথমে অবস্থা না কাউকে বলতে পারছি, না চুপ থাকতে পারছি। এই ভাবেই চলছে আজ এক সপ্তাহ হয়ে গেল , অফিস শেষে
রোজ বাড়ি আসছি আর এই ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছি- আজকাল বিজ্ঞানের যুগে যেখানে আমরা অনেক এগিয়ে গেছি, সেখানে আজকাল এসব কেউ অত বিশ্বাস করবে না ভেবে ঘটনাটা কাউকে বলার সাহস পাচ্ছি না।
অত্যন্ত ভয়ংকর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে যেতে সেই অভিজ্ঞতার বীজকে পাথেয় করে আজ আমার এই প্রবন্ধটি আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই।
প্রথমেই জানতে হবে আত্মা কি? আত্মা থেকে আত্ম> আমার আপনার আমাদের মধ্যে কার যে শক্তি, যা,আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে,আমাদের চাওয়া পাওয়া, ইচ্ছাসক্তি, আকাঙ্ক্ষা, যাবতীয় প্রার্থীব চাহিদা যা আমাদের প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করায় বা যার জন্য আমরা সংগ্রাম করি তাই হলো আমাদের মধ্যেকার আমি তথা আত্মা।
আমরা সবাই পার্থীব জগতের মধ্যে ব্যস্ত থাকি, কিন্তু এই পার্থিব জগতের বাইরে সুপ্ত সূক্ষ্ম জগতকে নিয়ে আমরা অতটা অবগত নই বা জানতে চাই না, কিন্তু আমরা নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনে পথ চলতে চলতে যখন সেই সুপ্ত সুক্ষ জগতের সামনাসামনি হই কিছুটা আমাদের মনের ভুল ভেবে উড়িয়ে দিই যদিও বিজ্ঞানের ভাষায় এর কোন অস্তিত্ব নেই। আমি খুব সাধারণ মানুষ- মহাপুরুষ বা মনীষী কোনটাই নই। কিন্তু এখন পার্থিবও জগতের বাইরের জগতের সাথে হঠাৎ করেই পরিচিত হয়ে পড়েছি নিজের অজান্তেই।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন- আমাদের জন্ম মৃত্যু সব তার হাতে সুতরাং কর্ম করেই যেতে হবে সংসারে, তারপর একদিন যখন তার ডাক আসবে তখন সব কর্মের হিসাব নিকাশ মিটিয়ে আমাদের পরলোকের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিতে হবে।
কিন্তু কখনো কখনো পরিস্থিতি চাপে পড়ে আমরা এমন কিছু কর্ম করে থাকি বা করতে বাধ্য হই যেটা হয়তো আমাদেরকে সময়ের আগেই মৃত্যুর কোলে নিয়ে যায় বা আমরা নিজেই তার পথ বেছে নেই। সময়ের আগে স্বইচ্ছায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া মানে আত্মহনন। আপনারা হয়তো ভাবছেন হঠাৎ আত্মহননের কথাই কেন বলছি?
সেই বিষয়েও পরে আসছি-
ধরুন আমাদের মনের কোন ইচ্ছেই যেটা পূর্ণ হবে না কখনো অথচ সেই ইচ্ছে পূরণ হওয়ার তীব্রতা বা সেই ইচ্ছাকে পূরণ করার তীব্রতাকে আমরা এতটাই বাড়িয়ে ফেলি তখন মনে হয়, যে কোন অবস্থায় সেই ইচ্ছের ইচ্ছে পূরণ হতেই হবে।
যদি কোন কারনে সেটা পূরণ না হয় তখনই বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাও শেষ হয়ে যায় মন থেকে আর তখনই আমরা নিজেদেরকে শেষ করে ফেলার মত দুঃসাহসিক কাজ করে থাকি। হ্যাঁ দুঃসাহসিকই বটে।
কারণ মানসিকভাবে দুর্বল কোন ব্যক্তি আত্মহন করে না। এবার আসি পরের কথায়।
আত্মহননের পর যে ইচ্ছা নিয়ে মৃত্যু হল সেই ইচ্ছার ইচ্ছা পূরণ করার ইচ্ছা মৃত্যুর পরও থাকে কারণ আত্মার কখনো মৃত্যু হয় না। কারণ আত্মা অবিনশ্বর। তখন এই পরলৌকিক আত্মা খোঁজে ইহলোকের আত্মা যাকে মাধ্যম বানিয়ে ইচ্ছা পূরণের পথ খোঁজে। তখন চলে সে মানুষটার খোঁজ ।আর সেই খোঁজ তারা( পরলৌকিক আত্মারা) যখন পেয়ে যান তখন সেই তীব্র ইচ্ছা পূরণের স্বপ্ন ওদের চোখে ভাসে তখন তারা চেষ্টা করেন এই লোকে সেই জীবিত আত্মা দের কাছে পৌঁছতে। হয়তো আমার সাথেও ঠিক সেই রকমই কিছু ঘটছে- কিন্তু ঠিক কিভাবে জানবো তার সাহস করে উঠতে পারছিনা। এবারে আসি ঠিক কি করে বুঝবেন যে তারা আপনাকে কিছু বলতে চাইছে?
প্রথমত- পরলৌকিক আত্মা ইহলোকে এলে তাদের উপস্থিতি আপনাকে বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে দেবে কিছু ঘটনার মধ্যে দিয়ে যাতে আপনি বুঝতে পারেন যে আপনার আশেপাশে আপনি ছাড়াও কারোর উপস্থিতি আছে, তবুও যদি আপনি না বোঝেন তারাও চেষ্টা করেন আপনাদের বোঝানোর, হয়তো আমাকেও এরকম কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছেন যেটা আমি বুঝতে পারছি না, আমার আগেও প্রচুর মানুষ এই বাড়িতে এসেছেন, থেকেছেন ,কিন্তু সবার কথা অনুযায়ী কেউ নাকি এত কিছু অনুভব করেনি, তাহলে আমি কেন করছি? এটাই আমারও প্রশ্ন ছিল, তারপর একটু গভীরে তলিয়ে ভাবতে ভাবতে মনে হলো ওই যে মাধ্যম! ইচ্ছাপূরণের। আমরা বেঁচে থাকতে যেসব জিনিস পছন্দ করি মৃত্যুর পরও তার ব্যতিক্রম হয় না ঠিকই কিন্তু যদি কোন অতৃপ্ত বিদেহী আত্মা কোন অতৃপ্ততা নিয়ে ইহ লোক ত্যাগ করে তাহলে তার এই অতৃপ্ত বাসনার সাথে সাথে সে সময় যে ঘটনার বস ভর্তি হয়ে তিনি এই লোক ত্যাগ করেন তার প্রতি খানিক অভিমান ও জন্মায়, একটু বুঝিয়ে বলি, মনে করুন বাড়িতে বাবা-মা সাজের জিনিস কিনে দেয়নি বলে মেয়েটির সাথে তার বাবা-মায়ের তর্কবিতর্ক হয় এবং মেয়েটি তার বশবর্তী হয়ে আত্মহনন করে, মৃত্যুর পরও তার বিদেহী আত্মা সেই সাজগোজের প্রতি আসক্তি থাকবে কিন্তু যখনই তার বয়সে কোন জীবিত মেয়ে একটু সাজগোজ করবে সেটা সে মেনে নিতে পারবে না কারণ সেই জিনিসটা যার প্রতি তার আসক্তি আছে ,কিন্তু আপনি পাচ্ছেন সে পায়নি ব্যাপারটা খানিকটা এইরকম আরকি!
এবারে আসি কোন বাসনা থেকে আত্মহননের পর পরলোকে তার পরিচিতি নাম বা আমরা তাকে যে নামে চিনি, যেমন- ব্রহ্মদৈত্য, সকন্দকাটা, শাকচুন্নি, পেত্নী, মামদো, গেছো, মেছো ,আলেয়া , একানোর, ডাইনি ,কালা ভুলো, পিশাচ, নিশি। অর্থাৎ এনারা মৃত্যুর আগেই নিজস্ব ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা মৃত্যুর পরও বহন করে চলেছেন এই বিষয়ে পরে বিশদে আলোচনা করব।
এদিকে আমি তো কিছুই বুঝতে না পেরে বেশ ভয় ভয়ই দিন কাটাচ্ছি, হঠাৎ একদিন মনে হল আর কতদিন ভয়ে ভয়ে দিন কাটাব! সাহস করে রুখে দাঁড়াতেই হবে-
আমি যেহেতু লেখালেখির সাথে যুক্ত তাই প্রত্যেকদিনই ঘুমোতে ঘুমোতে আমার বেশ টাইম লাগে রাত জেগে লেখালেখির সূত্রে একদিন জেগে আমি কাজ করছি, হঠাৎ আবার সেই আওয়াজ, এবার আর আমার একদম পাশে নয়, আমার খাটের সামনে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন ।আমিও ঠিক করলাম আজ আমি তার সাথে কথা বলবোই !যা হবার হোক।
বললাম- দেখুন আপনি আমাকে চেনেন না আমিও আপনাকে চিনি না, আপনি কেন এইভাবে আমাকে ভয় দেখিয়ে বিরক্ত করছেন! আর আমি শিল্পী মানুষ আমার মরার কোন ভয় নেই আর আমাকে মেরে আপনারও কোন লাভ নেই বরং আসুন না! আমি আর আপনি শান্তিতে থাকি! রোজ দুবেলা যা হবে আমরা দুজনে ভাগ করে খেয়ে শান্তি মত থাকবো-
তখন সে আমায় দেখা দিল খুব কম বয়সী একটি ফুটফুটে পচা সুন্দর মেয়ে সাদা ফ্রক পরা, দেখা দিয়ে বলল- তুই কি করিস ?গল্প লিখিস? না কবিতা? আমি বললাম -গল্প। শুনে সহাস্য বদনে আমার দিকে তাকিয়ে আবদার করার ভঙ্গিমায় বললে- তবে আমাদেরকে নিয়ে আমাকে নিয়ে একটা লেখা লিখবি? আমাদের কেউ বোঝেনা! আমিও তাকে কথা দিলাম তাদের নিয়ে একটি লেখা লিখব। এরপর থেকে আমিও শান্তিতে থাকতে লাগলাম ওই বাড়িতে আর সেও কোন বিরক্ত করেনি কখনো।
এ প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে মেয়েটি আমাকে দেখা দিয়েছিল তিনিও বেশ কয়েক বছর আগে আত্মহনন করেন ওই বাড়িতে মেয়েটির ইচ্ছে ছিল সে অনেক বড় লেখক হবে কিন্তু তার বাবা তাকে বিয়ে দিতে চায়, তখন তার চোখে বড় হয়ে ওঠার স্বপ্ন আর সেটা পূরণ করার কোন সম্ভাবনা চোখে দেখতে না পেয়েই সে আত্মহনন করে।

What's Your Reaction?
Excited
2
Happy
0
In Love
1
Not Sure
0
Silly
0
View Comment (1)

Leave a Reply

Your email address will not be published.


Scroll To Top