যমরাজ ও যমুনা: ভাইফোঁটার গল্প
A devoted foodie with keen interest in wild life, music,…
যমরাজ ও যমুনার এই কালজয়ী গল্পটি ভ্রাতা-ভগিনীর চিরন্তন স্নেহ ও বন্ধনের প্রতীক। যমরাজের যমুনার গৃহে আগমনের কাহিনীটি ভ্রাতৃস্নেহের মধুর সম্পর্কের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলে, যা আজও ভাইফোঁটা বা ভাই দুজের উৎসবের মূল অনুপ্রেরণা।
বহুকাল পূর্বে দেবলোকের এক বিশেষ ঘটনার কথা বলি যাহাতে ভ্রাতা ভগিনীর স্নেহ ও বন্ধনের অমৃতসুধা নিঃসৃত। যমরাজ, যিনি মৃত্যুর দেবতা হইয়া সর্বদা গম্ভীর ও করালমূর্তি ধারণ করেন, দীর্ঘকাল পর তাহার সহোদরা ভগিনী যমুনার গৃহে গমন করিলেন। তাহার আগমন সংবাদে যমুনার আনন্দ আর বাঁধ মানে না। এতকাল ভ্রাতা নিকটে নাই, মৃত্যুর দেবতা হইলেও সে তাহার নিকটে আপনজন; তাহার ভালোবাসায় অপূর্ণতার কোন অবকাশ নাই।
যমরাজ আসিলে যমুনা তাঁহার জন্য যথাযোগ্য আদর-আপ্যায়নের ব্যবস্থা করিলেন। ভ্রাতাকে তিনি সাদরে অভ্যর্থনা করিয়া বলিলেন, “ভ্রাতা, অনেকদিন পরে তোর মুখ দেখিতে পাইয়া আমার হৃদয় উজ্জ্বল হইয়া উঠিল।”
যমরাজ মৃদু হেসে কহিলেন, “হ্যাঁ, দীর্ঘদিন পার হইল বটে, কিন্তু কর্মজীবন হইতে সময় বাহির করিয়া আসিবার চেষ্টা যে করি নাই তাহা ভুল, কিন্তু মর্তলোকের প্রাণীদের উপরে টানিয়া আনিতে আনিতে প্রাণান্ত হইয়া গিয়াছি। তাহাদিগদের বাঁচিবার ইচ্ছা মনে হয় কমিয়া গিয়েছে, তাইতো তাহারা সর্বদাই বৃক্ষ কাটিয়া মর্তলোকে যমলোকে পরিণত করিতেছে।”
যমুনা প্রফুল্ল মুখে বলিল, “তুই আসিলি, ইহাই বড় কথা। আগে একটু বিশ্রাম কর। পরে তোর জন্য স্নেহের তিলক ও মিষ্টান্ন লইয়া উপস্থিত হইব।”
কিয়ৎকাল অতিবাহিত হইলে যমুনা একটি সোনার থালা লইয়া আসিলেন, যাহাতে তিলক, ধূপকাঠি, ফুল, মিষ্টি ও একটি প্রদীপ সাজানো রহিয়াছে। যমুনা ভ্রাতার কপালে তিলক পরাইয়া বলিল, “ভ্রাতা, এই তিলক তোর মঙ্গল এবং দীর্ঘায়ুর প্রতীক। তুই অনেক দিন বাঁচিবি, সুখে থাকিবি।”
যমরাজ তখন স্নেহে আপ্লুত হইয়া বলিলেন, “মোর কর্ম তো মৃত্যু বণ্টন করা। কিন্তু আজ এই তোর আদরের বন্ধন যেন সেই কঠোরতাকেও স্নেহময় করিয়া তুলিয়াছে। আমি আজ পরম শান্তি অনুভব করিতেছি।”
পরে যমুনা এক হাঁড়ি মিষ্টি ভ্রাতার সম্মুখে রাখিয়া বলিল, “এই মিষ্টান্ন সব তোর জন্য। কিছুটা মুখে দে ভাই, বহু রাত্রি জাগিয়া ইহা প্রস্তুত করিয়াছি।”
যমরাজ স্নিগ্ধ হাসিয়া কহিলেন, “তুই যে স্নেহের সঙ্গে এতসব করিয়াছিস, সেই ভালবাসা মোর সকল ক্লান্তি দূর করিয়া দিয়াছে। তবে, এত মিষ্টি একাই খাইব?”
যমুনা হাসিয়া কহিল, “তোর জন্য এই হাঁড়ি ভরিয়া মিষ্টি। সব খাইয়া শেষ করিবি। না করিলে আমি আবার রাগ করিব।”
এই কথা শুনিয়া যমরাজ বলিলেন, “আচ্ছা, তবে খাইতেছি।” এই বলিয়া যমরাজ হাসিমুখে মিষ্টান্ন খাইতে লাগিলেন। তিনি সবার শেষে হাঁড়ির একেবারে তলদেশে আসিয়া দেখিলেন, আর কিছুই অবশিষ্ট নাই। মুখভর্তি মিষ্টির আনন্দে তাঁহার চোখ ঝিকিমিকি করিতে লাগিল।
পরে যমুনা হাসিমুখে বলিল, “বল, ভ্রাতা, আজ এই স্নেহের বন্ধনে কেমন অনুভব করিতেছ?”
যমরাজ গভীর গম্ভীর কণ্ঠে বলিলেন, “আজ তোকে আশীর্বাদ করিতেছি তোর আয়ু হইবে চিরন্তন। আজ হইতে যাহারা এইরূপে ভগিনীর তিলক ও স্নেহের সঙ্গে মিষ্টান্ন গ্রহণ করিবে, তাহারা দীর্ঘায়ু ও সুখশান্তিতে জীবন যাপন করিবে।”
যমুনা বিস্মিত হইয়া বলিল, “তবে আজ হইতে প্রতি বর্ষে আমায় তোর জন্য এমন আয়োজন করিতে হইবে, আর তুইও আসিয়া মোর মিষ্টান্ন খাইয়া যাবি। না হলে আমি কিন্তু রাগ করিব।”
যমরাজ হাসিয়া বলিলেন, “আচ্ছা, তবে ইহাই হউক। প্রতি বর্ষে তোকে দেখিতে আসিব, আর তোর স্নেহে সম্পূর্ণ হইব। কিন্তু তুইও যেন সেই স্নেহের ডালি নিয়া প্রস্ত্তত থাকিস!”
এইরূপে যমরাজ ও যমুনার মধ্যে এক পবিত্র বন্ধনের সৃষ্টি হইল। ইহাই আজও ভাইফোঁটা বা ভাই দুজের দিনে উদ্যাপিত হয়, যাহা ভ্রাতা ও ভগিনীর অমর স্নেহবন্ধনের প্রতীক।
What's Your Reaction?
A devoted foodie with keen interest in wild life, music, cinema and travel Somashis has evolved over time . Being an enthusiastic reader he has recently started making occasional contribution to write-ups.