বিজয়া কি এবার শক্তি শুভ?



A devoted foodie with keen interest in wild life, music,…
জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্যা নিয়ে এই প্রবন্ধটি উৎসবের আড়ালে আমাদের মানবিক দায়িত্বকে তুলে ধরে। দূর্গা পূজার আনন্দে মগ্ন হয়ে আমরা সমাজের সংকটকে উপেক্ষা করছি। ‘শুভ বিজয়া’ বলতে গিয়ে আমরা কি মানবিকতার কথা ভুলে যাচ্ছি? মা দূর্গার আশীর্বাদ আমাদের শুধু আনন্দই নয়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার অনুপ্রেরণা দিক।
সকাল বেলায় যখন মুঠোফোনে একটা মেসেজ পেলাম, তাতে লেখা ছিল, “অশুভ শক্তির করাল গ্রাস থেকে মা দূর্গা আমাদের রক্ষা করুন। ছোটছোট ছেলে মেয়েরা অনশনরত জনগণের স্বার্থে, এমন অবস্থায় ‘শুভ বিজয়া’ বলতে পারলাম না। বিজয়ার শুভ ইচ্ছা রইল, ভালো থাকবেন, অন্তত ভালো থাকার চেষ্টা করবেন।” মেসেজটা যেন বিদ্যুৎগতিতে আমাকে নাড়া দিয়ে গেল। এক মুহূর্তে অনুভব করলাম, কতটা অসংবেদনশীল হয়ে গেছি আমরা—দূর্গা পূজার আনন্দে মাতোয়ারা, আর সেই মুহূর্তেই আমাদের সমাজেরই একটা অংশ, যারা আমাদের ভবিষ্যৎ সুস্থতার তত্ত্বাবধান করে, সেই সব জুনিয়র ডাক্তাররা তাদের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে লড়ছে।
এত বড় একটা উৎসব, যেখানে আমরা মা দূর্গার বোধন থেকে বিসর্জন পর্যন্ত নানা আচার-অনুষ্ঠানে মগ্ন, সেখানে এই ডাক্তাররা শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থে নয়, পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ‘ময়লা’ পরিষ্কার করতে উঠেপড়ে লেগেছে। তাঁরা যে অনশন করছে, সেটা কোনো সাধারণ দাবির জন্য নয়। রোগীসেবার যে জরাজীর্ণ ব্যবস্থা, যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার সাধারণ মানুষ সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, সেই অব্যবস্থার প্রতিবাদে তাঁরা অনশন করছে।
এদিকে আমরা ‘শুভ বিজয়া’ বলে পরস্পরকে মিষ্টি খাইয়ে যাচ্ছি, ঢাকের তালে তালে অঞ্জলির ফুল সাজাচ্ছি। কিন্তু তাঁদের কণ্ঠে আজ ‘শুভ বিজয়া’ উচ্চারিত হলো না। তাঁরা শুভেচ্ছা জানাতে চাইলেও যেন তাঁদের কণ্ঠ রুদ্ধ। এর চেয়ে বেদনাদায়ক আর কী হতে পারে?
আমরা যতই উৎসবের আনন্দে ডুবে থাকি, সেই আনন্দের আড়ালে একটা অপ্রিয় সত্য লুকিয়ে আছে। এই অপ্রিয় সত্য হলো—আমাদের সমাজে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভিত্তিটাই নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। আমরা যতক্ষণ মণ্ডপে নাচ-গান করছি, ততক্ষণ তাঁরা হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে নিজেদের ন্যায্য দাবির জন্য লড়ছে। তাঁদের অনশনে যে মৃত্যু হতে পারে, তা যেন আমাদের উৎসবের আনন্দে কোনো ছাপই ফেলছে না।
এইসব ভাবতে গিয়ে মনে হলো, আমাদের মানবিকতা কোথায় হারিয়ে গেল? আমরা কি এতটাই আত্মকেন্দ্রিক হয়ে গেছি যে অন্যের কষ্ট আমাদের ছুঁতে পারছে না? উৎসব আসবে যাবে, কিন্তু যে মানবিকতার মন্ত্র আমরা মা দূর্গার কাছে শিখতে পারি, সেটা কি আমরা ভুলে যাচ্ছি?
মা দূর্গার আগমনের মন্ত্রে আমরা যে ‘অসুর বিনাশ’ এর কথা বলি, সেই অসুর আমাদের অদূরেই আছে—সমাজের এই অব্যবস্থা, অনিয়ম, আর আমাদের নির্বিকারতা। তাই শুধু উৎসবের জৌলুসে না মেতে, সময় এসেছে একটু থেমে ভাবার। আমাদের উচিত এই ডাক্তারদের পাশে দাঁড়ানো, তাঁদের কষ্টকে উপলব্ধি করা, আর সেই সঙ্গে চেষ্টা করা যাতে তাঁদের দাবি শোনা হয়।
দূর্গা পূজার প্রকৃত অর্থ কি শুধুই উৎসব? নাকি মা দূর্গার আদর্শ আমাদের শেখায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার সাহস?
What's Your Reaction?

A devoted foodie with keen interest in wild life, music, cinema and travel Somashis has evolved over time . Being an enthusiastic reader he has recently started making occasional contribution to write-ups.