Now Reading
কিসের আওয়াজ !!

কিসের আওয়াজ !!

Avatar photo
কিসের আওয়াজ

কালিম্পংয়ের একটি সস্তা হোটেলে রাত্রিবেলা অদ্ভুত আওয়াজ শুনে এক সেলস কর্মীর ভয়াবহ অভিজ্ঞতার গল্প। হোটেলের ম্যানেজারের রহস্যজনক আচরণ এবং রাতে ঘর থেকে উঠে আসা অদ্ভুত শব্দগুলি কি কোনো অতিপ্রাকৃত ঘটনা ছিল? পড়ুন এই শিহরণকর কাহিনী।

সেলসের চাকরী, হেডকোয়ার্টার শিলিগুড়ি। দার্জিলিং, কার্শিয়ং, কালিম্পং – জুড়ে টেরিটোরি। কাজের কারণে রাতে বাইরে থাকতে হয়, সেই সুবাদে বেশকিছু হোটেল চেনাজানা।

কালিম্পং এ ডাক্তার বক্সী কে ভিজিট করতে গেছি। মেন রোডে কবি ভানু ভক্তের স্ট্যাচু পাশের গলিতে ডাক্তার বক্সীর চেম্বার। যখন চেম্বারে ডাক পড়লো, রাস্তা ফাঁকা, দোকানপাট বন্ধ। যে একটা দুটো খোলা, সেগুলো ঝাঁপ ফেলার মুখে।

ডাক্তারের চেম্বার থেকে কাজ মিটিয়ে বেরোতে রাত আটটা। শিলিগুড়ি যাবার বাস অনেক আগেই চলে গেছে। ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে গিয়ে জানলাম শেষ জীপ ছিল সাড়ে ছ’টায়।

ক্লক টাওয়ার থেকে ডানহাতে ভি এস গুরুং রোডে, আমাদের মতন ফেরিওলাদের থাকার আস্তানা ‘হোটেল হিলভিউ’, ছোট এবং সস্তার। পর্যটক বিশেষ আসে না, সেলসের লোকেদের মাথা গোঁজার ঠাঁই। হোটেলের চারিদিকে বাড়ি, রাস্তা, বাজার, দোকান – পাহাড়ের কোন চূড়া দেখা যায় না।

হোটেলের ম্যানেজারকে ফোন করে বললাম রাতে থাকার একটা ব্যবস্থা করে দিতে হবে। ম্যানেজার বললেন “একটাও ঘর ফাঁকা নেই”। তারপর বললেন “আসুন দেখছি, আপনি থাকতে পারলে আমার কোন আপত্তি নেই।”

হোটেলের ডাইনিং হল বন্ধ হবার মুখে, খাবার কিছুই নেই। রুটি-আন্ডা তড়কা দিতে পারে, তাই যথেষ্ট। ডিনার সেরে ঘরে এলাম। ম্যানেজার ঘর দেখিয়ে বললেন “এই ঘরটা ফাঁকা আছে, একটু অগোছালো।”

সারাদিনের ধকল, জানতাম একবার বিছানায় শুলে – কাল সকালের আগে ঘুম ভাঙবে না।

কালিম্পং-এ শীত এখনও থাবা না বসালেও, বেশ ঠান্ডা। কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লাম। ঘুম কিছুতেই আসছে না। গভীর রাত। খাটে এপাশ-ওপাশ করছিলাম। হঠাৎ যেন মেঝে থেকে উঠে এলো আওয়াজ। ভারী লোহার কিছু টেনে নিয়ে যাবার শব্দ; সব চুপ। এবার আওয়াজটা আগের চাইতেও বেশি সময় ধরে; আবার চুপ। এবার শুধু টেনে নিয়ে যাবার শব্দ নয়, সঙ্গে কিছু ভাঙার শব্দ। কেউ ভারী হাতুড়ি দিয়ে কিছু একটা ভাঙছে।

সাহস করে ঘরের দরজা খুলে দেখি লম্বা করিডরে একটা টিমটিমে আলো জ্বলছে, কেউ কোথাও নেই। একটু ভয় করছিলো। আমি ভূতটুতে খুব একটা বিশ্বাস করি না। এখন কি রকম গা ছমছম করছে।

ম্যানেজারকে ফোন করে বললাম “রাতে এরকম আওয়াজ হলে, ঘুমাবো কি করে?”
ম্যানেজার বললেন “রাস্তায় কাজ হচ্ছে, তার আওয়াজ। দুটোর পর কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। শুয়ে পড়ুন।”
বেশ অনেক রাত অবধি আওয়াজ হ’ল, তারপর বন্ধ। তখন অবশ্য কটা বাজে দেখে নি।

See Also
Comedy of Errors

পরদিন সকালে স্নান সেরে ব্যাগ নিয়ে ডাইনিং হলে। ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে যাবো। আজ দুপুরে কলকাতা থেকে বড় সাহেব আসবেন, তার আগে শিলিগুড়ি পৌঁছাতে হবে।

ডাইনিং হলে তমালের সঙ্গে দেখা, তমাল আমারই মতন অন্য কোম্পানির ফেরিওয়ালা। হেসে বললাম “কাল রাতে কি আওয়াজ! ঘুমোতে পারছিলাম না।”
তমাল বললো “রাতে! কই কিছু শুনি নি তো।”
আমি অবাক।

কথা বাড়ালাম না, নিশ্চয়ই রাতে মদ গিলে ঘুমিয়েছে। হোটেল ছাড়ার আগে ম্যানেজারের কাছে টাকা পয়সা মিটিয়ে দেবার সময় বললাম “এই আওয়াজে, আপনারা ঘুমান কি করে?”
ম্যানেজার কিছু বললেন না, মুচকি হাসলেন।

বাইরে বেরিয়ে মনে হ’ল দেখি তো কেমন রাস্তার কাজ হচ্ছে? হোটেলের আশপাশের রাস্তায়, কাজের কোন চিহ্ন খুঁজে পেলাম না। ভাবলাম, একবার হোটেলে গিয়ে ম্যানেজারের কাছ থেকে আসল ব্যাপারটা জানি। ফেরার তাড়া ছিলো, খোঁজ নেওয়া হলো না।

শিলিগুড়ি ফেরার পথে খটকাগুলো মেলানোর চেষ্টা করছিলাম। হোটেলে একটা ঘর খালি, তবু কেন ম্যানেজার বলল একটাও ঘর ফাঁকা নেই? রাতে অতো আওয়াজ, তমাল কেন শুনতে পেল না? ম্যানেজার কিভাবে জানলো ঠিক রাত দুটোর পর আওয়াজ বন্ধ হয়ে যাবে? সকালে ম্যানেজারকে আওয়াজের কথা বলতে কোন উত্তর না দিয়ে হাসলেন কেন? তাহলে কি……….?

What's Your Reaction?
Excited
1
Happy
0
In Love
0
Not Sure
0
Silly
0
View Comments (0)

Leave a Reply

Your email address will not be published.


Scroll To Top