Now Reading
দুষ্টু লোকের শাস্তি চাই

দুষ্টু লোকের শাস্তি চাই

Avatar photo
দুষ্টু লোকেদের শাস্তি হোক

বর্তমানের সমাজ পরিস্থিতি নিয়ে একটা কাল্পনিক গল্প যেখানে পিকলু নামক ছোট্ট ছেলেটি তার বাবাকে দুষ্টু লোকের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে। এই গল্পে  লেখক এক সুন্দর সমাজ গড়ার আহ্বান জানাচ্ছেন ।

“বাবা দুষ্টু লোকটা এখন কোথায়? জেলে” ছোট্ট পিকলুর প্রশ্ন সহিত ড্রয়িং রুমে প্রবেশ।
“দুষ্টু লোক? কে দুষ্টু লোক?” পিকলুর বাবা খবরের কাগজ থেকে চোখটা না সরিয়েই জিজ্ঞেস করলেন। সচরাচর উনি এরকম করেন না, কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে উনি তাকিয়ে উত্তর দেন, কিন্তু আজকের খবরটা আর জি করের ঘটনা নিয়ে, তাই বোধহয় চোখটা সরাতে পারলেন না।
“এ বাবা” পিকলু হেসে উঠলো “তুমি দুষ্টু লোককে চেনো না? ওই যে যারা মুকুলকে ধরে নিয়ে গেছিল?”
“মুকুল? মুকুল আবার কে?” এইবার কুমার বাবু চোখ না উঠিয়ে পারলেন না। কি জানি কি ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে।
“ধুসস, তুমি কিছু জানো না, আমি বরং দাদুকে জিজ্ঞেস করি।”
“আরে শোন শোন, কার কথা বলছিস আমায় বোঝা তো একটু।”
“আরে ‘জয় বাবা ফেলুনাতে’ মুকুলকে যে ধরে নিয়ে গেছিল দুষ্টু লোকগুলো ওদের কথা জিজ্ঞেস করছি।”

“ও তাই বল” কুমার বাবু শান্তির নিঃশ্বাস নিলেন “ওটাতো সিনেমা বাবা।”

“ও তার মানে দুষ্টু লোক শুধু সিনেমাতেই ছিল?”

এইবার কুমার বাবু নড়েচড়ে বসলেন, একটু ভেবে বললেন “না দুষ্টু লোক আমাদের আশেপাশেই আছে।”

“কোথায়?”

“এই যেমন ধর, যদি কেউ কাউকে মেরে ফেলে বা….” একটু থামলেন কুমার বাবু, তারপর বললেন, “দেখ আমি তোকে কিছু জিনিস শিখিয়ে দেই, যখন দেখবি কেউ ওই জিনিসগুলো করছে তখন বুঝবি ওরা দুষ্টু লোক।”

“বল বল”

“যদি দেখিস কোন লোক কোন মেয়ের বেশি কাছে চলে যাচ্ছে আর বিরক্ত করছে তখন বুঝবি ওটা দুষ্টু লোক।”

“ও তার মানে তুমিও দুষ্টু লোক?”

“মানে?”

“তুমিও মায়ের কাছে যাও, তার মানে তুমিও দুষ্টু লোক।”

“হা হা হা” কুমার বাবু হেসে উঠলেন, “তোর মাকে কোনদিনও দেখেছিস আমি তোর মাকে ধরলে মা কোনদিনও বিরক্ত হচ্ছে?”

“না না, মাও তো তোমাকে হামি দেয়।”

এই শুনে কুমার বাবু একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন । নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন “কোনদিনও দেখেছিস তোর মা একাই রান্না করছে আর আমি কিছু করছি না?”

“না না, তুমি তো মাটন টা মার থেকে আরো ভালো বানাও।”

“হুম, যে ছেলেরা বাড়ির কোন কাজ করতে চায় না, শুধু পায়ের উপর পা দিয়ে বসে থাকে তারা দুষ্টু লোক, মনে রাখবি ছেলে মেয়ে সকলেই সমান। মেয়েদের কাজ বা ছেলেদের কাজ বলে কিছু হয় না সবাই মিলে একসাথে চলতে হয়।”

“এবার বুঝেছি, কিন্তু বাবা জানো রমেনকে ওর বাবা বলেছে ছেলেরা কাঁদে না, শুধু মেয়েরা কাঁদে, সেটা কি সত্যি বাবা?”

“না, যদি কান্না পায় সেটাকে এক্সপ্রেস করতে শেখো ,কাঁদবে, যদি আনন্দ হয় তাহলে আনন্দটাকেও প্রকাশ করবে, তাহলেই তুমি বড় হয়ে দুষ্টু লোক হবে না।”

“আর বাবা রাগ হলে?”

“রাগ হওয়াটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার, কিন্তু যখন রাগ হবে তখন রাগের মাথায় কোন কাজ করতে নেই, বরং যখন রাগটা চলে যাবে তখন ভাববে কেন রাগ হয়েছিল আর সেই রাগের কারণটা থেকে সরে আসবে।”

“বুঝলাম না, আমার যখন পড়তে ইচ্ছে করে না আর মা আমাকে পড়তে বসায় তখন আমার খুব রাগ হয় তখন কি করব?”

“তোর যখন পড়তে ইচ্ছে করবে না তখন মাকে বলবি আমি এখন পড়বো না, যখন ইচ্ছে করবে তখন পড়বো।”

“কিন্তু আমার তো কোন সময়ই পড়তে ইচ্ছে করেনা।”

“কেন? তোকে আমি যখন পড়াই তখন পড়তে ইচ্ছে করে না?”

“তুমিতো গল্প করে করে পড়াও।”

“তাহলে তুইও গল্পর মতন করেই পড়বি?”

See Also
Early indians

“কিন্তু রমেনের বাবা যে বলেছে যদি ভালো মার্কস না পাই তাহলে ও ভালো চাকরি পাবেনা?”

“শোন পড়াশোনাটা জ্ঞান অর্জন করার জন্য হয়। চাকরি পাওয়ার জন্য নয়, যদি জ্ঞানটা অর্জন করিস তাহলে চাকরি কেন যেকোনো ধরনের কাজই তুই করতে পারবি বুঝলি?”

“হ্যাঁ বুঝলাম বাবা” বলে পিকলু গান গাইতে গাইতে ভেতরে চলে যায়।”

—–

সেদিন বিকেলে পিকলু বারান্দায় বসে রেকাবি থেকে জলখাবার খাচ্ছিল, আর ঠিক তখনই সে দেখে নিচে রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ হাঁটছে আর স্লোগান দিচ্ছে “জাস্টিস ফর আর জি কর”। পিকলু দৌড়ে গিয়ে বাবাকে জিজ্ঞেস করল “বাবা এত লোক হাঁটছে কেন? আর কি একটা বলছে জাস্টিস ফর আর জি কর। তার মানে কি?”

“ওরা একটা দুষ্টু লোকের শাস্তি চাইছে।”

“আমিও যাব দুষ্ট লোকের শাস্তি চাইতে?”

“চল তোকে নিয়ে যাই।”

সেদিন হাজার হাজার শহরবাসীর সাথে একটা ছোট্ট ছেলে হাঁটছিল আর তার হাতে একটা প্ল্যাকার্ড ছিল তাতে লেখা “দুষ্টু লোকের শাস্তি চাই”।

আজ আমাদের সমাজের যা অবস্থা, তাকে শোধরাতে হবে , আর শোধরানোর জন্য খালি মিছিল করলে হবে না ।আমাদের বাড়িতে , আমাদের নিজেদের পরিবারের সাথে সেই প্রচেষ্টা শুরু করতে হবে। যদি আপনার ছেলে সন্তান থাকে, তাহলে তাকে নারীদের সম্মান দিতে শেখান। নিজে নিজের বাড়ির মহিলাদের সাথে সম্মান দিয়ে কথা বলুন। নোংরা ভাষার প্রয়োগ কোনদিনও করবেন না। তাকে ‘গুড টাচ, বাট টাচ’ শেখান, আর সাথে শেখান নিজের আবেগকে প্রকাশ করতে। এই ছোট্ট জিনিসগুলো যদি আমরা বাড়ি থেকে শুরু করি তাহলে দেখবেন সমাজটা সত্যিই একদিন সুন্দর হয়ে উঠবে। আসুন না আমরাও চেষ্টা করি এক সুন্দর সুশীল সমাজ গড়ে তুলতে?

 

Disclaimer : যে ছবিটা প্রবন্ধে বেবহার করা হলো সেটির সাথে এই কাল্পনিক গল্পের কোনো যোগাযোগ নাই, যদিও এই গল্পটি লেখা ছবিটি দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে 

The child photograph used as the featured image is of Ruben Aich.

What's Your Reaction?
Excited
0
Happy
0
In Love
0
Not Sure
0
Silly
0
View Comments (0)

Leave a Reply

Your email address will not be published.


Scroll To Top