Now Reading
Kill এ হেমলক, Bill এ ভালোবাসা – কিলবিল সিনেমার রিভিউ

Kill এ হেমলক, Bill এ ভালোবাসা – কিলবিল সিনেমার রিভিউ

Avatar photo
কিলবিল সোসাইটি

কিলবিল সোসাইটি” একটি আবেগময় প্রেমকাহিনি ও আত্মজিজ্ঞাসার গল্প, যা “হেমলক সোসাইটি“-র উত্তরসূরি হিসেবে এক যুগ পর পর্দায় ফিরিয়ে এনেছে ‘আনন্দ কর’-কে।

“কিলবিল সোসাইটি” দেখে কিছু কথা পেটের মধ্যে কিলবিল করছে। ১৩ বছর আগের কলেজ পড়ুয়া আমি যখন হেমলক সোসাইটি দেখেছিলাম, তখন যে শক ভ্যালু আমার কাছে ছিল, এই ধারণা বা প্রত্যাশা নিয়ে কিলবিল সোসাইটি দেখতে বসলে কিন্তু হতাশ হতে হবে। তো স্বাভাবিকভাবেই আমি সেই প্রত্যাশা নিয়ে সিনেমা দেখতে বসিনি।

হেমলক সোসাইটি

গল্প -এখানে প্রথমেই বলে রাখা ভালো যে কিলবিল সোসাইটি কিন্তু হেমলকেরই দ্বিতীয় ভাগ অর্থাৎ সিক্যুয়েল । গল্প সাদামাটা, যা অনেকটাই ট্রেলার-টিসারে রিভিলড্। আর তাই প্রথম ভাগের মতোই টক্সিক বয়ফ্রেন্ড থিওরি এইভাগেও বিদ্যমান, অবশ্যই ১৩ বছর অর্থাৎ এক যুগের বেশী সময় বিশেষে টক্সিসিটির মাত্রাও ভিন্ন। এক আধুনিকা ইনস্টা ডিভা টার্নড অভিনেত্রী পূর্ণা আইচের জীবনে তৈরি হওয়া ক্রাইসিস পড়ুন বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত ইন্টারনেটে লিক হয়ে যাওয়া এবং তারপরে তার একজন কন্ট্রাক্ট কিলার মৃত্যুঞ্জয় কর ওরফে আনন্দ কর-কে নিযুক্ত করা নিজেকেই শেষ করার জন্য এই নিয়েই পরিচালক আরেকটি গল্প ফেঁদেছেন, যদিও গল্পের মূল নির্যাস অ্যাঞ্জেলিনা জোলির ১৯৯৭ সালের ঘটা একটা ঘটনা (ঘোষিত)। গল্পে যে ছিটে ফোঁটা রসদ ছিল, সেই রসদে একটা দু’ঘণ্টা ১৫ মিনিটের সিনেমা বানানোটা সত্যি কৃতিত্বের ব্যাপার। কারণ এই রকম গল্পে যে এতটা সময় দর্শকদের বসিয়ে রাখা যায় এটা একটা মিরাকল্, যেটা পরিচালক করে দেখিয়েছেন। যদিও এটা হেমলকের সিক্যুয়েল বলেই সম্ভব হয়েছে।

রেটিং – ১/৫

সৃজিৎ মুখার্জি

ডায়লগ – সৃজিৎ মুখার্জির সিনেমায় ডায়লগ এর একটা আলাদা কলাম রাখতেই হবে। অন্যান্য সৃজিতের সিনেমার মতো এই সিনেমার ডায়লগও প্রচুর হাততালি পাবে। পূর্ণা, পেটকাটা ষ -র চরিত্র দুটির নিজেদের মধ্যে সংলাপ গুলো যথেষ্ট যত্ন করেই লেখা হয়েছে। এছাড়াও মৃত্যুঞ্জয় ও পূর্নার মধ্যে সংলাপ গুলোও বেশ মনোগ্রাহী। বিশেষ করে মৃত্যুঞ্জয় এর পূর্ণা কে জিজ্ঞাসা করা – “অনুপম রায় কে তোমার কেমন লাগে?! ” আর প্রচুর পুরোনো সিনেমাকেও হোমাজ দেওয়া হয়েছে সংলাপের মাধ্যমে। ছবির শেষে মৃত্যুঞ্জয় করের মুখে একটা লম্বা মনোলগ বেশ ইমোশনাল করে দেয়।

রেটিং – ৩.৫/৫

গান- হেমলক সোসাইটির মতোই কিলবিল সোসাইটিও কিন্তু গান বহুল একটি ছবি। হেমলকের গানগুলো যেমন আজও আমাদের মন খারাপের দুপুরগুলোর মলমের কাজ করে, হেমলকের সঙ্গে তুলনা না করেই বলছি এই সিনেমার গানগুলি ও কিন্তু যথেষ্ট মনোগ্রাহী। এবং ছবি শেষে ও কিন্তু গানগুলো মনে রেশ রেখে যায়। এই ছবিতে মিউজিক ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন অনুপম রায়, রনজয় ভট্টাচার্য ও তমালিকা। সৃজিতের সিনেমায় অনুপম রায়ের গান নিয়ে কিছু বলার নেই অন্যান্য বারের মতো এবারও তিনি ছক্কা হাঁকিয়েছেন, তার গলায় “ভালোবেসে বাসো না”, “সন্ধ্যে নামে” ও সোমলতার গলায় “নেই তুমি আগের মত” শুনতে ভালো লাগে। ছবি শেষ ক্রেডিটে রুপম ও সিধুর ডুয়েট “রেফারির বাঁশি” ও বেশ ভালো। তবে দুর্নিবারের গাওয়া “সাতজন্মের পরিচয়” -এর লিরিক্স ও গানটির চিত্রায়ন বহুদিন মনে থাকবে।

রেটিং – ৩.৫/৫

পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় and কৌশানী চক্রবর্তী

অভিনয়- আসলে এই সিনেমার অন্যতম হাইলাইট কিন্তু কোন “সৃজিতিয় টুইস্ট” নয় বরঙ্ সৃজিতিয় অ্যাক্টিং ওয়ার্কশপ। প্রথমেই বলি হেমলক সোসাইটির মেঘনা -র চরিত্রে কোয়েল মল্লিকের সঙ্গে তুলনা না করেই বলছি নায়িকার ভূমিকায় পূর্ণা ওরফে কৌশানী চক্রবর্তী বেশ ভালো। বিশেষ করে বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে ঝামেলার দৃশ্যে, মায়ের সঙ্গে দ্বৈরথের দৃশ্যে বা মৃত্যুঞ্জয় করের সঙ্গে খুনসুটির দৃশ্যে কৌশানি খুব ভালো। “আবার প্রলয়” এবং “বহুরূপী”র পর কৌশানির মুকুটে নতুন পালক যুক্ত হল। টক্সিক বয়ফ্রেন্ড ‘জো’ এর চরিত্রে অনিন্দ্য স্বল্প পরিসরে ভালো কাজ করেছেন। পূর্ণার সাপোর্টিভ দিদির চরিত্রে সন্দীপ্তা কে দেখতে বিশ্বাসযোগ্য লাগে, তবে তার চরিত্রটি আরেকটু যত্ন করে লেখার দরকার ছিল এবং চরিত্রটি একটু স্পেস ও ডিমান্ড করে। পূর্ণার মায়ের চরিত্রে তুলিকা বসুর অভিনয় একটু অতি নাটকীয়। আর আজকালকার দিনে মা মেয়ের বন্ডিং এতটা ঠুনকো হয় এটাও বিশ্বাসযোগ্য নয়। পূর্নার ম্যানেজারের চরিত্রে অরিজিতা মুখার্জির কাজ ভালো। এবার আসি এই এই সিনেমার অন্যতম হাইলাইট চরিত্র পেটকাটা ষ -র ভূমিকায় বিশ্বনাথ বসুর কথায়। তিনি এক কথায় অনবদ্য, ফাটাফাটি। তার চরিত্রের প্রথম সিন থেকে তিনি যেভাবে চরিত্রটি হোল্ড করেছেন তা অভাবনীয়। তার কমিক টাইমিং যে ভালো সে নিয়ে তো তর্কের অবকাশ নেই, কিন্তু এই চরিত্রটিতে তিনি যে হিউমারটা যোগ করেছেন, সেটা যেকোনো সময় ভাঁড়ামোর পর্যায়ে চলে যেতে পারতো কিন্তু তা হয়নি। বিশেষ করে পূর্ণার সঙ্গে হাসপাতালের দৃশ্যটি এবং তার ”ফ্যামিলি ড্রামা” জঁরের সিনেমার প্রতি ভালোবাসা-র দৃশ্যায়ন দুর্দান্ত। সাম্প্রতিক কালের এরকম চরিত্র অামি কেবলমাত্র ভুতের ভবিষ্যৎ সিনেমার প্রমোদ প্রধান ওরফে পোঁ* প্রধান ছাড়া দেখিনি। এবার আসি মৃত্যুঞ্জয় কর ওরফে আনন্দ কর-এর ভূমিকায় পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, তার আগে ডিরেক্টর কে দুটো কথা-
দেখুন সৃজিতদা, একটা চরিত্র আপনি তৈরি করেছেন, কিন্তু এত বছরের সেই চরিত্রটা আমরা লালন পালন করেছি, বুকে ধরে রেখেছি। যতই আপনার সৃষ্ট চরিত্র হোক না কেন, এত বছরে সেই চরিত্রটি যে পরিমাণ ভালবাসা আমাদের থেকে পেয়েছে যে “সে” আমাদেরই একজন হয়ে উঠেছে। এই “সে” আর কেউ নয় আনন্দ কর। এবারে আপনি আনন্দকে ‘মৃত্যুঞ্জয়ে’ পরিণত করলেন। অর্থাৎ, মৃত্যুকে জয় করেছেন যিনি। সত্যিই তিনি মৃত্যুকে জয় করলেন। আসলে মৃত্যুঞ্জয় শব্দের অর্থ তো এক্ষেত্রে মৃত্যুকে জয় করা নয়, মৃত্যু ভয় কে জয় করা।কিন্তু সেই চরিত্রের স্ক্রিন টাইম ও পরিনতি আমাকে বা আমার মত অগুন্তি আনন্দ কর- ফ্যানকে যন্ত্রনা দিয়েছে। আর এটাই হয়তো ইমোশনাল কানেক্ট, তার জন্য আপনার ধন্যবাদ প্রাপ্য। এবারে প্রসঙ্গে ফিরে আসি, আনন্দ বা মৃত্যুঞ্জয় করের ভূমিকায় পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় অসাধারণ। উনি বিভিন্ন ইন্টারভিউতে বলছিলেন যে আনন্দ কর ওনার মধ্যে কোথাও বসে ছিল লাস্ট ১৩ বছর ধরে, তার প্রতিফলন সত্যিই পর্দায় দেখা গেল। তিনি যেন যেখান থেকে শেষ করেছিলেন হেমলকে, সেখান থেকেই শুরু করলেন। সামান্যতম কোন জায়গায় বিচ্যুতি নেই, মৃত্যুঞ্জয় কর-কে আমার আরো বেশি সাবলীল, আরো বেশি কাছের মানুষ মনে হয়েছে। এই মানুষটার মধ্যে বিশেষ কোনো হিরো-ইজম নেই আবার সাধারণ মানুষের মতো প্রেমে পড়ে যাওয়ার প্রবণতা ও রয়েছে। এই চরিত্রটি আমার মনে হয় আনন্দ করের থেকেও বেশি কঠিন ছিল। এবং শেষ সিনেও চরিত্রটিতে কোন অতি নাটকীয়তা ছিল না। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় আনন্দ ওরফে মৃত্যুঞ্জয় করের ভূমিকায় অমর। পরমব্রতর প্রথম পাঁচটি সেরা কাজের মধ্যে মৃত্যু-এনজয়(আনন্দ) কর আসবে।

রেটিং – ৪.৫/৫

See Also
FTII Breathes New Life into Ritwik Ghatak’s Fear

ছবির দৃশ্যায়ন ও ক্যামেরার কাজ ভালো। নর্থ বেঙ্গল ও কালিম্পং এর দৃশ্যায়ন চোখে আরাম দেয়। সিনেমেটোগ্রাফার হিসেবে ইন্দ্রনাথ মারিকের কাজ ভালো। এতকিছু ভালো থাকা সত্ত্বেও গল্পের প্লট লাইনের খামতি ঢাকতে ব্যর্থ। কিন্তু হেমলক সোসাইটির মতো একটা কাল্ট সিনেমার সিক্যুয়েল হিসাবে এই সিনেমাটি বাংলা ছবির দর্শক কে হলমুখি করবে এই স্বাভাবিকত্বর আশা রাখাই যায়। প্রায় মধ্য ত্রিশে পৌঁছে ও প্রেমের ছবির প্রতি আকর্ষণ আমার অন্তত আজও অটুট, তাই আমার “কিলবিল সোসাইটি” পর্দায় দেখতে ভালো লেগেছে। আপনারও ভালো লাগতে পারে যদি আপনি প্রেমের ছবি দেখতে ভালবাসেন, যদি আপনি ‘আনন্দ কর’-এর ফ্যান হন অথবা আপনি যদি সৃজিত মুখার্জি -র একবগ্গা ক্রিটিক না হন। ঐ যে বললাম একযুগে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়, শুধু আনন্দ কর-রা যুগে যুগে রয়ে যান মৃত্যুঞ্জয় হয়ে..

“কাঁধে মাথা রেখে তোমার, হব এ দিগন্ত পার;
গানে গানে পাড়াবে ঘুম তোমার ও দু ঠোঁট..
ক্ষণে ক্ষণে চোখে হারাই, ব্যাকুল ও নয়ন তারায়,
শেষমেষ পাই কাছে মনেরও বুনোট..”

ফিল্ম রেটিং – ৩+০.৫/৫

Film – Killbill Society
Director – Srijit Mukherji
Cast- Kaushani, Parambrata, Biswantah & others
Reviewed by Suman Adhikary from “Stories With Suman & Co.”

 

What's Your Reaction?
Excited
3
Happy
2
In Love
3
Not Sure
0
Silly
0
View Comments (0)

Leave a Reply

Your email address will not be published.


Scroll To Top