পয়লা বৈশাখ ১৪৩২: হালখাতার হাল আর ইলিশের দল



A devoted foodie with keen interest in wild life, music,…
পয়লা বৈশাখ ১৪৩২-এর আনন্দময় উদযাপন ও হালখাতার ঐতিহ্য নিয়ে একঝলক হাস্যরসাত্মক রচনা। বাঙালির নতুন বছর শুরু হোক ইলিশ, আলপনা আর একগাল হাসি দিয়ে। ইতিহাস, সংস্কৃতি ও খাওয়াদাওয়া—সব একসাথে!
চলো বাঙালি, আবার বছর ঘুরে এল সেই শুভক্ষণ – পয়লা বৈশাখ! মানে আমাদের নববর্ষ, যখন আম, জাম, হালখাতা, আলপনা আর হাঁড়ি ভরা ইলিশ একসঙ্গে বলে ওঠে, “কিরে, কবে থেকে আবার ডায়েট করবি রে?”
তা পয়লা বৈশাখ ঠিক কবে থেকে শুরু হল, সে নিয়ে ইতিহাসবিদেরা এখনো হালখাতা খুলে বসে আছেন। তবে শুনতে পাই, এই ক্যালেন্ডার চালু করেছিলেন এক মহান রাজা, নাম শশাঙ্ক – বছরটা ছিল ৫৯৪ খ্রিস্টাব্দ। মানে তখনও আমাদের পাড়ার মোড়ের দোকানে ‘নগদে কড়ি, বাকিতে বিরক্তি’ লেখা ঝুলছিল না। কিন্তু হালখাতা? সে কিন্তু তখন থেকেই চলছে, আর আজও চলছে একেবারে ঝকঝকে খাতা আর এক বাক্স সন্দেশ হাতে।
পয়লা মানেই পার্বণ, আর পার্বণ মানেই প্ল্যানচেট নয়, প্লেট!
যথারীতি, নববর্ষ আসতে না আসতেই বাড়িতে শুরু হয় ‘লাগে কি আরেকটা বালতি ফিনাইল?’ সংলাপ। মা বাড়ি মোছার স্পিডে যেন অলিম্পিক রিলে দৌড় দিচ্ছেন। বাবাও হয়ত উৎসাহে গদগদ, যতক্ষণ না তাঁকে ছাদে তুলে জামাকাপড় মেলতে বলা হয়।
সকালবেলা একবার সূর্য উঠল কি, অমনি ‘শুভ নববর্ষ’ মেসেজের বন্যা – কারও মেসেজে শুধু ফুল, কারওটায় আবার কবিতার সঙ্গে একখানা হাঁপাতে হাঁপাতে আসা ইমোজি। তারপর শুরু হয় আলপনা আঁকা। পাড়া থেকে টেনে আনা সাত নম্বর শ্রুতির ছোট মেয়ে এসে দাগে দাগে হাঁস, পদ্মফুল, আর মাঝে মাঝে এমন কিছু আঁকে, যেটা উল্টে না ধরলে কি সেটা বোঝা যায় না।
নতুন জামা পরার দিন – তবে ট্যাগটা কেটে নিয়েছ তো?
নতুন জামা মানে একরাশ স্মৃতি। দাদু-ঠাকুমার সময়ে যখন জামা পাওয়া যেত রমজানে, দুর্গাপুজোয় আর নববর্ষে। এখনও কেউ কেউ ফেসবুকে ‘নতুন পাঞ্জাবি vs পুরোনো আমি’ বলে পোস্ট দেন। কেউ কেউ আবার বলেই বসেন, “সেলফি তোলার আগে জামার দামটা বলে দাও, না হলে লাইক আসবে না।”
তবে আসল কাণ্ডটা ঘটে রান্নাঘরে।
পয়েলা বৈশাখের সকাল মানেই চাপ — মা বলছেন, “ইলিশে কাঁটা একটু বুঝে খাস, গলায় আটকালে আমি কাঁচা লঙ্কা ঢেলে দেব!” রান্নাঘরে তখন একযোগে চাপা গন্ধ – ইলিশ ভাজা, ছানার ডালনা, ধোকার ডালনা, সন্দেশ, চিরচিরে সেমাই – আর বাবার দূর থেকে ভেসে আসা কান্নার মতো কণ্ঠ, “চা হবে?”
বাজার আর হালখাতা – এক যুগলবন্দি
এই দিনে দোকানদারদের মুখে হাসি, আর পেছনে হিসেব। একদিকে খাতা খুলে ‘শুভ হালখাতা’ লেখা হচ্ছে লাল কালি দিয়ে, আর অন্যদিকে ভাবা হচ্ছে – “ওরে, পঞ্চাননবাবু এখনও তো গত বছরের টাকা দেয়নি… ওঁর নামে এবার একটা তারকা চিহ্ন বসাব!”
এবং হ্যাঁ, মেলা ছাড়া পয়েলা বৈশাখ অচল।
পাড়ার মাঠে বসেছে বৈশাখী মেলা – যেখানে পাটিসাপটা আর পিপঁড়ের পিকনিক চলে পাশাপাশি। ভুতুড়ে ঝুলনায় চড়ে দিদিমণি অর্ধেক শাড়ি হারিয়ে ফেলেছেন, আর পাশেই দাঁড়িয়ে এক বাবু কাঁচি দিয়ে পটকা ফাটিয়ে আনন্দে গলগলিয়ে হাসছেন।
শেষে বলি, পয়েলা বৈশাখ শুধু একটা তারিখ নয়, এটা বাঙালির হৃদয়ের ক্যালেন্ডারে একটা রঙিন পাতা – যেখানে ইলিশ নাচে, সন্দেশ খালি গলায় গান গায় আর হালখাতার পাতায় লেখা থাকে নতুন স্বপ্ন।
তাই সবাইকে জানাই – শুভ নববর্ষ! আর হ্যাঁ, হালখাতায় কিস্তি দিয়ে নয়, আজ একটু হেসে নাও – কারণ এ বছরও গরমটা হাড় গলাবে, কিন্তু মনটা যেন ঠাণ্ডা থাকে সন্দেশের মতো!
What's Your Reaction?

A devoted foodie with keen interest in wild life, music, cinema and travel Somashis has evolved over time . Being an enthusiastic reader he has recently started making occasional contribution to write-ups.