Now Reading
২১ এ ফেব্রুয়ারি একটু অন্যরকম গল্প

২১ এ ফেব্রুয়ারি একটু অন্যরকম গল্প

Avatar photo
a fountain pen kept on a paper with bengali handwriting draft

২১ এ ফেব্রুয়ারিতে একটি যাত্রার গল্প, যেখানে সময়ের সাথে সাথে বাংলা ভাষার প্রতি আগ্রহ বাড়লো বাংলা সাহিত্যকে অন্বেষণ করে। এবং এতটাই অনুপ্রাণিত করল যে বাংলা ভাষার গল্প লেখার দিকে পরিচালিত করল। এটি শিক্ষার উপর মাতৃভাষার শক্তি এবং ভাষাগত বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও প্রচারের গুরুত্বের একটি প্রমাণ।

লেখক : সোমাশীস গুপ্ত

আজ ২১ এ ফেব্রুয়ারি। ঘড়ির কাটাতে এখন সকাল ছটা । সোমাশীষ, এখনও ঘুমিয়ে আছে। আর আমি? আমি দুচোখ মেলে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। ঠিক যেমন ৪৩ বছর আগে ওকে দেখতাম, এখনো সেরকমটাই ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি।

সত্যি ৪৩ বছর কেটে গেছে আমাদের প্রথম দেখা হওয়ার দিন থেকে। আমার মনে পড়ে সেদিন হাতে হাত রেখে আমরা দুজনে প্রথম স্কুলে গেছিলাম। তখন ওর কত বয়স ? বড়জোর সাড়ে তিন কি চার। বর্ষাপাড়ার সাউথ পয়েন্ট স্কুলের সেই ক্লাসরুমে আমরা একসাথে বসে পড়তাম। ইংরেজি, গণিত, বাংলা, বিজ্ঞান আরো কত কিছু।

এখানে বলে রাখা ভালো সাউথ পয়েন্টে ভর্তি হওয়ার প্রধান কারণ ছিল বাংলা পড়া। ওর মা বাবা অনেক খুঁজে এই স্কুলটা পেয়েছিলেন যেখানে বাংলা পড়ানো হয়। তখন গৌহাটিতে অন্য কোন স্কুলে বাংলা পড়ানো হতো না।

তবে সত্যি বলতে কি, আমি লক্ষ্য করতাম যে ওর বাংলা ভাষার প্রতি কোনদিনও আগ্রহ ছিল না। আমার মনে আছে, বাকি সাবজেক্ট এ ভালো নম্বর পেলেও বাংলায় একেবারে লবডঙ্গা। কোনদিনও ৩০ এর ঘর পেরুতে পারতো না সোমাশীষ।

সবচেয়ে মজার ঘটনা কি জানেন, ওর তখন ক্লাস টেন, HSLC পরীক্ষা দেওয়ার আগে, Pre test এ বাংলায় সোমাশীষ ৬ পেয়েছিল। স্কুলের প্রিন্সিপাল Mrs. Chanda ওকে ডেকে পাঠালেন। ম্যাডাম ওকে খুব সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে দিলেন যে বাংলায় পাস না করলে বাকি সাবজেক্টে ভালো মার্কস পেলেও সে পাস করতে পারবে না। পরদিন থেকে তাকে স্কুলে এসে শুধু বাংলা পড়ার নির্দেশ দিলেন ম্যাডাম।

বাংলা শিক্ষিকা ছিলেন অন্নপূর্ণা সিস্টার,তিনি আবার ক্লাস ১ এর ক্লাস টিচার। ওকে ক্লাস ১ এর বাচ্চাদের সাথে বসে পড়তে দেখতে আমার খুব হাসি পেত। আরো হাসি পেত যখন দেখতাম ও বর্ণপরিচয় পর্যন্ত জানে না। ওকে সিস্টার লিখতে বললে ও বাচ্চাদেরকে জিজ্ঞেস করত করে লিখতো।

তবে সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ঘটনাটা হয় HSLC পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার দিন। সবাইকে চমকে দিয়ে সোমাশীষ বাংলায় ৬২ পেয়ে পাশ করল। আমার মনে আছে, মৌমিতা পুরকায়স্থ, সোমাশীষের সহপাঠী, সারা আসামে বাংলায় প্রথম স্থান পেয়েছিল, তবে ম্যাডাম  এবং অন্নপূর্ণা সিস্টার, সে খবর থেকেও বেশি খুশি হয়েছিলেন যখন শুনলেন সোমাশীষ বাংলায় ৬২ পেয়ে পাস করেছে।

এতো ছিল ছোটবেলার কথা বা স্কুলের কথা। তারপর ১৯৯৪ সালে, যখন সে উচ্চমাধ্যমিক পড়ছে, একদিন হঠাৎ করে একটা ক্যাসেট তার হাতে এলো। সুমনের গানের ক্যাসেট, আমি দেখলাম সেই গানগুলো শুনে তার বাংলা গানের প্রতি একটা অবাক করা আগ্রহ। বলে রাখা ভালো ওর ওয়েস্টার্ন মিউজিক বা রক মিউজিক এগুলো ছাড়া অন্য কিছুতে মন বসত না। সেই সোমাশীষ দিনে একবারটি হলেও সুমনের গান শুনত।

See Also
খেয়ালের খেরো খাতা

পরের বছর আমরা চিরকালের মতো গুহাটি ছেড়ে কলকাতায় পাড়ি দেই, আর তারপর থেকে ওর বাংলার প্রতি আকর্ষণটা দিন দিন বেড়ে চলেছিল । আমি মনে মনে খুব খুশি হতাম, মাতৃভাষা বলে কথা, তা না শিখলে কি চলে। এরপরে দেখলাম সে ছোটখাটো কিছু বাংলা গান আমার সাথে বসে লেখা শুরু করল। বাংলা উপন্যাস পড়া শুরু করল। বিভূতিভূষণ, শিবরাম চক্রবর্তী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, এমনকি নজরুল রবীন্দ্রনাথও কিছু কিছু পড়ে ফেলেছে।

তারপরে যা ঘটলো, সত্যিই অবাক করে দেওয়ার মতো। আর সেই সাংঘাতিক কাণ্ড কি জানেন? কয়েকদিন আগে দেখলাম সোমাশীষ বাংলায় দুতিনটে গল্প লিখে ফেলেছে। একেই বোধহয় বলে মাতৃভাষার প্রতি আকর্ষণ। মনে পড়ে গেল সুমনের গানের একটা লাইন “ম মানে মরবে না মাতৃভাষা”। আজ ২১ এ ফেব্রুয়ারি, মাতৃ ভাষা দিবসে এই ছোট্ট অভিজ্ঞতা গুলো আপনাদের কাছে বলে ফেললাম।

এই দেখুন এত কথা বললাম কিন্তু নিজের নামটাই বলতে ভুলে গেলাম, আমার নাম ঝর্ণা, ঝর্ণা কলমচি যাকে আপনারা ইংরেজিতে বলেন ফাউন্টেন পেন।

 

What's Your Reaction?
Excited
11
Happy
6
In Love
10
Not Sure
0
Silly
0
View Comment (1)

Leave a Reply

Your email address will not be published.


Scroll To Top