হেঁকু এবং হরেন – চোর ধরার গল্প



Saptarshi, a finance professional, has a camaraderie with his camera…
এখন ওয়ার্কিং ফ্রম হোম। বেশ মজার ব্যাপার। বড়কর্তার চোখ রাঙ্গানি দেখতে হয় না। কিন্তু সেদিন রাতে এক ভয়ঙ্কর ঘটনা। কি ঘটলো জেনে নিন এই গল্পে।
গত একমাস ধরে হেঁকু একটু রাত করে শুতে যায়। আপিস যাওয়া বন্ধ আজ প্রায় সোয়া একমাস। সেই যে একগাদা ফাইল পত্তর ব্যাগে করে কোনো এক শনিবার বাড়ি এসেছিল, তার পর আর আপিসের পথে যাওয়া হয় নি। মাঝে সাঝেই বড়ো সাহেব মহাবীর হোর হেঁড়ে গলায় ফোন করে। এটা সেটা টুক টাক কথা বার্তা হয়। খুব একটা পাত্তা দেয় না সে আজকাল মহাবীর কে।
হেঁকু বুঝেছে আপাতত এই বন্দী দশায় আরতি এর নির্দেশ অনুযায়ী চলাটাই সমীচীন। Work for home কেই জীবনের মন্ত্র করেছে সে। সকাল থেকে বাজার হাট তো লেগেই আছে। দু জন সবজি মাসী, একজন মেছো মেশো আর এক মুরগি কাকা এখন তার সাপ্লাই চেইন। এছাড়া আছে এক রুটি বৌদি! আর আছে রগচটা কানাই মুদি। প্রতিদিন সকালে নিয়ম মাফিক এদের কারো না কারো সঙ্গে দেখা হবে হেঁকুর। নাক ঢাকা কাপড়ের আস্তরণে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরখ করে জিনিসপত্র কেনে সে। কখনো আলুর আকার আকৃতি, কখনো বা মুরগির জন্ম মাস, কখনো পাউরুটির টাটকা থাকার মেয়াদ, এ সবই গোয়েন্দার দৃষ্টি নিয়ে যাচাই করে হেঁকু। এসব করে ঘর্মাক্ত কলেবরে বাড়ি ফেরে সে। তারপর সময় মতো কাপড় চোপড় কেচে রোদে শুকাতে দিতে ছাদে ওঠে হেঁকু। পাশের বাড়ির মিনু বউদি ও মাঝে মাঝে ছাদে আসে ঐ সময়। কানে ফোন। মুখে চোখে তেরছা হাসি। বিছানার চাদর কেচে সেটা মেলে তার পিছনে লুকিয়ে দাড়িয়ে দেখে হেঁকু।
এর মধ্যেই নিচ থেকে আরতি হাঁক পাড়ে,” বলি ছাদেই থাকবে ?”
হেঁকু এবার বাড়ি ঝার মোছ করবার কাজে লেগে পড়ে। ব্যাক টু ব্যাক। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যে নামে। দক্ষিণের বারান্দায় ফুরফুরে মেজাজে মাঝে সাঝে কিঞ্চিৎ সুরাপান করে সে। তারপর রাত্তিরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে, একটু টিভি দেখে। ঘুমের কোলে ঢুলে পড়তে বেশি সময় লাগে না হেঁকুর। আজও তেমনি হয়েছিল। পানিও বোধ হয় খানিক বেশি ই পড়েছিল পেটে।
খুট খুট করে একটা শব্দ হচ্ছিল বেশ অনেকক্ষণ ধরে। তিনতলার এই ঘরের সামনে খোলা ছাদ। একটা চৌকো বারান্দা পেরিয়ে ঘরের দরজা। একটা গ্রিলের গেট মাঝখানে। হ্যাঁ, ঐ ছাদের দিক থেকেই আসছে শব্দটা। বিছানায় শুয়ে অন্ধকার এ চোখ সয়ে যেতে হেঁকু বুঝতে পারে একটা ছায়ামূর্তি গ্রিলের গেট খুলে ঢোকবার চেষ্টা করছে। চোখের পাতা তার বেশ ভারী। তবুও জোর করে তাকায় সে। একটা বেঁটে লোক। হেঁকু পা টিপে টিপে ঘরের দরজার পিছনে লুকিয়ে পড়ে। লোকটা গেট টা খুলে মনে হলো একটা আরামের নিঃশ্বাস ছাড়লো। এবার সেও সন্তর্পনে এগিয়ে আসে ঘরের দিকে। খোলা পাল্লা দিয়ে ঢুকে পড়ে ভিতরে। হাতে একটা মোবাইল ফোন। সবজেটে একটা আলো পড়েছে মেঝেতে। মোটামুটি ঘরের মাঝখানে পৌঁছে যায় সে। খানিক এগুলেই খাট। অন্ধকারে সাদা চাদর বেশ বোঝা যায়। ঠিক এই মুহূর্তে হেঁকু দড়াম করে ঘরের দরজা বন্ধ করে। কেলে লোকটা ঘাবরে গিয়ে যে পথে এসেছিল সে পথে ফিরতে গিয়ে ঠিক ঠাহর করতে পারে না। অন্ধকারের মধ্যে এসে ধাক্কা মারে হেঁকুর গায়ে। গায়ের সমস্ত জোর দিয়ে হেঁকু এবার তাকে ধরাশায়ী করে ফেলে। স্যুইচ টিপতেই আলোয় ঘর ঝলমল করে ওঠে। লোক টা বুঝতে পারে তার পালাবার পথ বন্ধ।
“- কে রে তুই? এত রাত্তিরে ছাদ বেয়ে উঠে ঘরে ঢুকেছিস? তোর সাহস তো কম নয়।”
লোকটা গুড়ি সুরি মেরে বসেছে হাঁটু ভাঁজ করে, মাথা গুঁজে। সারা মুখ জুড়ে একখানা রংচটা ডোরাকাটা গামছা জড়িয়েছে সে।
– ” কথা কানে যাচ্ছে না তোর ?” খেঁচিয়ে ওঠে হেঁকু।
-“আজ্ঞে ভুল হয়ে গ্যাছে। চুরি করতেই এসেছিলাম, বলতে পারেন “, খ্যান খ্যানে গলায় বলে লোকটা।
– “বলতে পারেন, মানে? থাকিস কোথায় তুই ? মুখ থেকে ওই নোংরা ন্যাতা টা সড়া …”
– “ধোপা খালের ঐ ধারে ,”
– “একা না আর আছে কেউ তোর স্যাঙাত “?
– “না একাই এয়েচি। ”
খানিক নিশ্চিন্ত হয় হেঁকু। বন্ধ দরজার সামনে আম কাঠের টুল টেনে বসে পড়ে সে। এবার জেরা শুরু হয়, নেশা ভাঙ্গা হেঁকুর নৈশ অনুসন্ধিৎসা চাগিয়ে ওঠে।
– “তুই জানিস না দেশে এখন লক ডাউন চলছে। এর মধ্যে তুই কোন আক্কেলে চুরি করতে বেরিয়েছিস? নাম কি তোর?”
লোকটা এবার ভ্যাঁ করে কেঁদে উঠলো। ” আজ্ঞে, পুলিশে দিয়েন না, সব বলতিসি আমি।”
– “ওই নাকি কান্না বন্ধ কর। নাম কি কি তোর “। কড়া হয় হেঁকু।
– ” হরেন বন্দোপাধ্যায়। বাড়ি মহিষবাথান, সে অনেক দূর।”
– ” বাবা, বামুনের ছেলে নাম তার “হরেন”! নামের সঙ্গে কাজের তো খুবই মিল । তা এতদূর চুরি করবার জন্য এসেছিস?”…
” কি করবো গ্রামের দিকে আমাদের কাজ পাওয়া খুব মুশকিল। সব তো সিন্ডিকিটির হাতে। আমাদের সবাইকে মেম্বর হতি হবে। যা মাল উঠবে, তার দশ আনা ছ আনা ভাগ হই যাবে। সে পচুর ঝামেলা।”
– ” তাই কলকাতা চলে এলি? তুই তো পরিযায়ী শ্রমিক এর মধ্যে পড়বি…!”
– ” কি কইলেন, পজাপতি ?”
– “না কিছু না। যা বলছিলি বল …”।
– ” যবে থিকি সব বন্ধ হই গ্যাসে , বাজার খুব মন্দা যায়। বিশ্বাস করেন। বাড়িতে বাড়িতে এত লোকজন..গম গম করে। রোজই ভাবি, আজ কিসু একটা হবি, কিসুই হোয় না। শালা…”
– “তো আজ কি মনে হোয়েছিল কিছু হবে ?? অ্যাঁ ? মাল কড়ি থলে ভরে বাড়ি যাবি ?’
“আজ তো অমাবস্যা ছেল। বাড়িতে ফোন করি সবাই কেমন আছে জিজ্ঞেস করতি, জোসনা বললো কিনা আজ একবার টেরাই মারতে। তাই….”
– “আর তুমি ট্রাই মারবার বাড়ি পেলেনা? এই বাড়িতেই আসতে হলো? আমি তোকে পুলিশে দেবো।”
সিরেঙে বেঁটে লোকটা এবার হেঁকুর পায়ের কাছে পড়ে ডাইভ দিয়ে। সোশ্যাল ডিস্টেন্সিঙের কথাটা মাথায় রেখে হেঁকু ঝট করে পা সরিয়ে নিল।
– ” আমারে ছেড়ে দ্যান। আর কখনো আসবো নি এদিক পানে। পিসনের পাঁচিল ডিঙয়ে , পাইপ ব্যায়ে যেমনটি উঠেছেলাম, তেমনটি চলে যাব। ছেড়ে দ্যান , কাকু।” আবার ডুকরে কেঁদে ওঠে হরেন।
” না না কোনো চান্স নেই। পুলিশে তোকে আমি দেবই। করোনার থেকেও পাজি তুই ”
– ” আমি নাকে ক্ষত দি, যা কইবেন কইরে দেবো।”
হিল্লোল খেলে গেলো হেঁকুর সারা শরীরে। বলে কী? এতো প্রদীপের জিন, একে তো কালটিভেট করতে হচ্ছে বটে!
– “ওই শোন, কাল থেকে সকাল সকাল চলে আসবি রাস্তার মোড়ে। আমি থাকবো ওখানে। যা যা বলবো বাজার করে দিবি আমায়। আর হ্যাঁ, টুপি দেবার চেষ্টা করেছিস কি হাজত বাস। ক্যামেরা তে তোর ছবি তুলে রাখলাম, আর মোবাইল নম্বর টা দে….”
” ল্যাখেন কাকু, ৯০৫০৬৭…”| ফোনে লিখতে থাকে নম্বরটা হেঁকু। খানিক বাদে একটা প্রতিধ্বনি হতে হতে আর কিছু শোনা গেলো না।
” কি গো উঠবে না তুমি?? আরে বাজার তো বেলা এগারোটার মধ্যে বন্ধ করে দেবে বলছে। বলি আমরা কি উপোস করে থাকবো আজ??”
আরতি চিৎকার করছে নীচ থেকে। হুড় মুড়িয়ে হেঁকু উঠে বসে বিছানায়। মোবাইল ফোন টা হাতে নিতেই স্ক্রীনে ভেসে ওঠে একটা নম্বর, যেটা তার খুব চেনা। ফোনের বোতামটা হালকা চাপ দ্যায় হেঁকু।
উত্তর আসে ” this telephone number does not exist “!!!
What's Your Reaction?

Saptarshi, a finance professional, has a camaraderie with his camera and pen as he tries to capture the wonderful light and sight along his way and write about the world and people around him.
I was very pleased to uncover this great site. I need to to thank you for ones time for this fantastic read!! I definitely appreciated every bit of it and I have you bookmarked to look at new information on your blog.