স্মৃতিচারণ
Megha is a homemaker. She always wanted to be a…
এটি এক ভিন্ন আঙ্গিকের গল্প। লেখক মেঘা দত্ত তার ছোটবেলার এক স্মৃতি তুলে ধরেছেন যেটা এখনো তাকে পিড়া দ্যায়।
আমরা ছোটবেলায় হয়তো সবাই সময়ের মূল্য এই প্রবন্ধটি পড়েছি , সেই সময় হয়তো শুধুই পড়েছি বা মুখস্ত করেছি, কিন্তু ঠিকমত যথার্থ মানে বুঝতে প্রায় সারাটা জীবন আমাদের লেগে যায়।
আমরা সবাই জানি যে জীবন টা আমদের খুব বেশি দিনের নয়। তবুও যে সময়টা আমরা অবহলতে হরিয়ে ফেলি তার অর্ধেক সময়ো যদি আমরা সত্তি করে কোন ভালো কজের জন্য খরচা করতাম তা হলে হয়তো আজ জীবনের এই গোধূলি বেলাতে এসে এত আপসোস থাকতো না।
জানিনা সবার জীবনে এই কথাটা কতটা সত্তি, কিন্তু অমি মনেপ্রাণে আজ এটা উপলব্ধি করি ।
প্রত্তেক বারের মতো শরত্কালের ঝকঝকে মনভালো করা রোদ্দুরে যখন চারিদিক ঝলমল করে ওঠে,আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর নিচে কাশ ফুলের মেলার মায়ের আগমনী বার্তা বয়ে আনে ।
প্রকৃতি যেন নিজের হাতে জত্নো কড়ে বঙ্গভূমি কে সাজিয়ে তোলে মায়ের পদধুলী পড়ার আশাই। ঠিক সেই সময় আমর মণ অতিতের এক বিস্সন্নতাই ভরে ওঠে, ঝাপসা হয়ে আসে চোখের দৃষ্টি। মনটা যেন হুহু করে ওঠে, আজ ও জেনো খূঁজে বেড়াই সেই দিনের হারিয়ে জাওয়া একটা করুণ মুখ। সে বার পুজাই আমরা বাড়ির সবাই মিলে কেনাকাটা করতে বেরিয়ে ছিলাম। আমার বয়েস তখন অলপো, সেই কারণেই হয়তো মণ টা রঙিন প্রজাপতির মতো উড়ছিল খুব আনন্দ করে কেনাকাটা করছিলাম হঠাৎ নজর পড়লো রাস্তার উল্টোদিকের দোকানের উপর দেখলাম সেখানে বছর আটেক এর একটা মেয়েকে তার এক মাথা উস্কোখুস্কো চুল গুলোর মধ্যে দিয়ে অযত্নের কালো মুখটি উঁকি দিচ্ছিল। মেয়েটির রোগা শুকনো চেহারা টা কে ঢেকে রেখেছিল একফালি রং চটা শতচ্ছিন্ন একটা জামা। দোকানের ঝুলিয়ে রাখা রংচঙে একটি সুন্দর ফ্রক এর দিকে সে তার ছোট্ট হাতটি বাড়িয়ে ছিল।
সে জানতো এই ফ্রক টি পাওয়া তার সাধ্যের বাইরে তাই হয়তো স্পর্শ করে বুঝতে চাই ছিল সেটার অপার মহিমা আর ঠিক সেই মুহূর্তে একটা কর্কশ চিৎকার তার স্বপ্নের ঘর কাটিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিল তাঁকে নির্মম বাস্তবের মাঝখানে। মেয়েটির বাইরের শতছিন্ন পোশাক কাপড় চেহারার তার অপরাধ হয়ে দাঁড়ালো শুধুমাত্র হাত দিয়ে একটু ছুঁতে চেয়েছিল ফ্রকটা এই অমার্জনীয় কাজটির জন্য এটাই ছিল তার পুরস্কার মেয়েটির চোখের জল নিঃশব্দে ধুয়ে দিচ্ছিল তার গালটি মুখ বুজে সে সব সহ্য করল। এতকিছুর পরেও বারেবারে ঘুরে দেখছিল ফ্রকটিকে কিন্তু সেখানে দাঁড়িয়ে দেখার দুঃসাহস তার ছিল না। একটা লাইট পোস্টের পেছনে ছোট্ট শরীর তাকে আড়াল করে রেখেছিল সে। আমি শোরুম থেকে সবটা দেখলাম আমার আঠারো বছরের বিদ্রোহী মন একটু জানান দিয়েছিল আমাকে। মনে হচ্ছিল ছুটে গিয়ে ওই মেয়েটিকে জামাটা কিনে দি। কিন্তু শোরুমের কাঁচের দেয়ালের ওই পারে গিয়ে সেদিন কিছুই করতে পারিনি, হয়তো একটু বললেই ব্যবস্থা হয়ে যেত। ছোট্ট মেয়েটির হাতে তুলে দিতে পারতাম তার স্বপ্নের ফ্রকটি। তার মুখের হাসিতে আমার পুজোর আনন্দ শতগুণ বেড়ে যেতে পারত। হয়তো আজ আমাকে সেই স্মৃতিটা বেদনা না দিয়ে সুখময় হয়ে উঠতো। জানি , কারো কাছে আমাকে এর জন্য জবাবদিহি করতে হবে না কিন্তু যার কাছে আমি বারে বারে হেরে গেছি, সে হলো আমার বিবেক। সেদিন পুজোর আনন্দে আমি ভেসে গেছিলাম, পরে যখন মনে পড়েছিল তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। এক বুক অভিমান নিয়ে সেই মেয়েটি কোথায় যে হারিয়ে গেছিল তার আর কোনো হদিস পাইনি আর কখনো পড়ে তাকে দেখতে পাইনি।
সময় বয়ে গেছে অনেকট, সেই সময়ের মূল্য যে আমি দিতে পারিনি -তার বৈশ্বি কোনো মেয়েকে দেখলে আজও ব্যথায় মনটা ভরে যায়।
আজ সে আমার সামনে এসে দাঁড়াল, আমি তাকে চিনতে পারব কি? জানি এটা একটা খুবই সাধারণ ঘটনা কিন্তু এটা আমার মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখা। আমার সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। তব, ঈশ্বরের কাছে তার জন্য আমি প্রার্থনা করি যে যেই কাজ আমি করতে পারিনি সেই কাজটা যেন সেই মেয়েটি করতে পারে, ঈশ্বর যেনো তাকে সেই ক্ষমতা ও ইচ্ছাশক্তি দেন…… আমি সেটা নাইবা দেখলাম।
What's Your Reaction?
Megha is a homemaker. She always wanted to be a writer, and that is why she has decided to put her thoughts to paper.