Now Reading
‘সোনার কেল্লা’ সিনেমার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন ও কিছু অজানা গল্প

‘সোনার কেল্লা’ সিনেমার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন ও কিছু অজানা গল্প

Avatar photo
সোনার কেল্লার ৫০ বছর পূর্তি ক্যালেন্ডার

বাঙালির আবেগ জুড়ে সত্যজিৎ রায় এবং তাঁর সিনেমা ‘সোনার কেল্লা‘। গত ২০শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ‘সোনার কেল্লা’ সিনেমার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে মুকুলের পাড়ায় এক অনুষ্ঠান হয়ে গেল। শুনলাম ‘সোনার কেল্লা’ সিনেমা তৈরীর নেপথ্যের কাহিনী। স্মৃতিচারণ করলেন শ্রী সন্দীপ রায়, শ্রী কুশল চক্রবর্তী (মুকুল) ও শ্রী সিদ্ধার্থ চ্যাটার্জী (তোপসে)।
কলমে: রাজ কুমার মুখার্জী

‘সোনার কেল্লা’ সিনেমার প্রথম দিকের সেই সিনটার কথা মনে পড়ে যেখানে একটি ঘরে মুকুল তার আঁকা ছবি ফেলুদা কে দেখিয়ে বলছে “এটা আমার বাড়ি, এইখানে আমি থাকতাম।”সেই ঘরেই আজ শ্যামসুন্দর জুয়েলার্স প্রকাশ করলেন ক্যালেন্ডার। উপলক্ষ্য সোনার কেল্লার ৫০ বছর পূর্তি।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শ্রী সন্দীপ রায় (বিশিষ্ট চিত্র নির্মাতা ও সত্যজিৎ রায়ের সুযোগ্য পুত্র), শ্রী কুশল চক্রবর্তী (মুকুল), শ্রী সিদ্ধার্থ চ্যাটার্জী (তোপসে) ও আরো অনেকে।

শ্যামসুন্দর জুয়েলার্সের কর্ণধার শ্রী রূপক সাহা, শ্রী সন্দীপ রায় (বিশিষ্ট চিত্র নির্মাতা ও সত্যজিৎ রায়ের সুযোগ্য পুত্র), শ্রী কুশল চক্রবর্তী (মুকুল), শ্রী সিদ্ধার্থ চ্যাটার্জী (তোপসে)
শ্যামসুন্দর জুয়েলার্সের কর্ণধার শ্রী রূপক সাহা, শ্রী সন্দীপ রায় (বিশিষ্ট চিত্র নির্মাতা ও সত্যজিৎ রায়ের সুযোগ্য পুত্র), শ্রী কুশল চক্রবর্তী (মুকুল), শ্রী সিদ্ধার্থ চ্যাটার্জী (তোপসে)

আলাপচারিতায় উঠে এলো ‘সোনার কেল্লা’ সিনেমার নেপথ্যের কাহিনী। শ্রী কুশল চক্রবর্তী (মুকুল) বললেন যখন সিনেমাটা শুরু হয় তখন তার বয়স ছিল সাড়ে ছয়। সিনেমা কি সেটা একদমই জানতেন না। মুকুলের প্রথম দুটো সিকোয়েন্স – এক ঘুম থেকে উঠে ছবি আঁকছে, দুই বাড়িতে রিপোর্টার এসেছে এবং পাথর নিয়ে কথা হচ্ছে। এই দুটো সিনের ডায়লগ মুকুলের বাবা, রুদ্রপ্রসাদ চক্রবর্তীকে সত্যজিৎ রায় লিখে পাঠিয়েছিলেন। সেখানে লিখে দিয়েছিলেন কুশলকে ডায়লগ গুলো পড়িয়ে রাখবে এক্কেবারে মুখস্ত করাবে না। এক্কেবারে শব্দটা আন্ডারলাইন করে দিয়েছিলেন। উনি জানতেন শিশু শিল্পী ডায়লগ মুখস্থ করলে তার থেকে অভিনয়, যেটা উনি চাইছেন, সেটা বার করতে পারবেন না। শ্রী কুশল চক্রবর্তী (মুকুল) বলছিলেন শুটিংয়ের সব মজার মজার গল্প। সবচাইতে মজার লোক ছিলেন কামু মুখোপাধ্যায় (মন্দার বোস)। ছোট্ট মুকুলের সঙ্গে বেশ ভাব জমিয়ে ফেলেছিলেন। অথচ লালমোহন দত্ত (জটায়ু) যাকে দেখলে বেশ মজা লাগে, তিনি কিন্তু ছিলেন বেশ রাশভারী লোক। শুটিংয়ের ফাঁকে ফাঁকে মোটা মোটা আইনের বই নিয়ে পড়তেন আবার তাতে কি সব দাগিয়েও দিতেন।

শ্রী কুশল চক্রবর্তী (মুকুল) ও শ্রী সিদ্ধার্থ চ্যাটার্জী (তোপসে)
শ্রী কুশল চক্রবর্তী (মুকুল) ও শ্রী সিদ্ধার্থ চ্যাটার্জী (তোপসে)

শ্রী সিদ্ধার্থ চ্যাটার্জীর (তোপসে) কাছ থেকে শুনলাম এক মজার কাহিনী। সোনার কেল্লা শুটিংয়ের সময় তোপসের বয়স তখন সাড়ে বারো। বাঙালিরা এখন রাজস্থান বেড়াতে গেলে সোনার কেল্লা দেখতে ভোলেন না। সেখানে কিন্তু সত্যজিৎ রায় বা ফেলুদার চাইতেও বেশি পরিচিতি মুকুলের। একটা সিনেমা ‘সোনার কেল্লা’ জয়সলমিরের ওই অঞ্চলের অর্থনৈতিক চরিত্র বদলে দিয়েছে।

শ্রী সন্দীপ রায়
শ্রী সন্দীপ রায়

শ্রী সন্দীপ রায়, যিনি সবসময় তার বাবার সঙ্গী ছিলেন। বললেন সিনেমা বানানোর ছোট ছোট কাহিনী। স্টিল ক্যামেরায় তখন তিনি বহু ছবি তুলেছেন। সত্যজিৎ রায় ফেলুদার সিরিজ নিয়ে সিনেমা করবেন এটা প্রথমদিকে কখনোই ভাবেননি। সন্দীপ রায় বললেন তার দেখা মোস্ট অ্যাডভেঞ্চারাস শুটিং ছিল ‘সোনার কেল্লা’। লোকেশন থেকে পুরো শুটিং-সব সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন। পঞ্চাশ বছর আগে তখন মোবাইল, কম্পিউটার, ই-মেল কিছুই ছিল না। ছিল চিঠি লেখা আর অন্যপ্রদেশে ফোন করতে হলে ট্রাঙ্ক কল। তারই মধ্যে একদম শিডিউল ধরে দিল্লি, জয়পুর, জয়সলমির-সব জায়গায় শুটিং করে গেছেন, কোথাও পান থেকে এতোটুকু চুন খসে নি।

এখানে দুটো ঘটনার কথা না বললে বোধহয় পুরো প্রতিবেদন লেখা অসমাপ্ত হয়ে যাবে। দুর্গের (নাহাড়গড়) উপর থেকে মন্দার বোস আসল ডাক্তার হাজরা কে ঠেলে ফেলে দেবার পর মুকুল দুর্গের ওপর থেকে নেমে এসে জিজ্ঞেস করছে ডাক্তার কই? নকল ডাক্তার হাজরা কে দেখিয়ে বলছেন ইনি ডাক্তার হাজরা, ওই ডাক্তার তো ঊট দেখে ভয় পেয়েছে। সেই সময় মন্দার বোস পা ছুঁড়ে উটের লাথি দেখাচ্ছিলেন। পা ছোঁড়াছুঁড়ি করতে গিয়ে তিনি বারবার এগিয়ে আসছিলেন। সত্যজিৎ রায়ের বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন কামু উটের লাথি খেয়ে লোক এগিয়ে আসে না, পিছিয়ে যায়। পরে কামুবাবু ঠিক ঠিক শট দিয়ে সিনটা উতরে দেন। কত বড় মাপের পরিচালক হলে তবেই এইরকম ছোট ছোট ব্যাপারে নজর এড়িয়ে যায় না।

See Also
CO2 s impact in Global Warming

দ্বিতীয় ঘটনা – সোনার কেল্লার ভেতরে শুটিং। এর জন্য দেড় দিন ধার্য করা হয়েছিল। কোন এক বিশেষ কারণে কেবলমাত্র তিন ঘন্টা সময় পাওয়া যায়। ওই তিন ঘন্টার মধ্যে কোনরকম খাতা বা কাগজে লেখা খসড়া না দেখেই সত্যজিৎ রায় ৭৫ টা সিন করেছিলেন। এটা বোধহয় অন্য কোন পরিচালকের পক্ষে সম্ভব নয়।

সোনার কেল্লা সিনেমা করার আগে প্রায় দেওয়াল জোড়া আর্ট পেপার, নানা রঙের কালিতে শিডিউল তৈরি করেছিলেন সত্যজিৎ বাবু। সেখানে কোন দিন কোথায় শুটিং হবে, কোন ট্রেনে যাওয়া হবে, কোন স্টেশনে নামা হবে, কি কি সিন হবে, সিনে কে কে থাকবে, কার কি ডায়লগ – সব পুঙ্খানুপুঙ্খ লেখা ছিল। ওই কাগজটা শুটিং এর স্টেশনে ঘুরে বেড়াতো। যে কেউ সেই কাগজটা দেখলে গোটা সিনেমাটা বোধহয় বানিয়ে ফেলতে পারবে।

সবশেষে শ্যামসুন্দর জুয়েলার্সের কর্ণধার শ্রী রূপক সাহা ও ড্রিমার্সের শ্রী সুদীপ্ত চন্দ কে এইরকম একটি অভিনব প্রচেষ্টার জন্য ‘ইস্ট ইন্ডিয়া স্টোরি’র তরফ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

What's Your Reaction?
Excited
4
Happy
5
In Love
1
Not Sure
0
Silly
1
View Comments (0)

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Scroll To Top