সুচিত্রা সেন-এর সিনেমার পোস্টারের প্রদর্শনী
Raj Kumar Mukherjee - sexagenarian. A father, a husband and…
বাঙালির আবেগ মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। তাঁর সিনেমার হাতে আঁকা পোস্টারের প্রদর্শনী – পিছন ফিরে দেখতে ইচ্ছে করবে ফেলে আসা স্বর্ণযুগের বিখ্যাত বাংলা সিনেমা। একদিকে দিকপাল অভিনেতারা অন্যদিকে মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। ‘বক্স অফিস হিট’ করা একের পর এক ছবি। নস্টালজিক হয়ে পড়াটা মোটেই দোষের নয়।
৬ই এপ্রিল থেকে ১২ই এপ্রিল ২০২৪ কলকাতার আইসিসিআর এ মহানায়িকা সুচিত্রা সেন -এর সিনেমার পোস্টার এক্সিবিশন হয়ে গেল। ১৯৫২ সাল থেকে তাঁর পথ চলা শুরু। প্রথম ছবি ‘শেষ কোথায়’ (১৯৫২) যদিও ছবিটি মুক্তি পায়নি। তারপর ‘সাত নম্বর কয়েদী’ (১৯৫৩) ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ (১৯৫৩) থেকে শুরু হয়ে বাংলা সিনেমা জগতে তাঁর অবদান অনেক। বাংলা সিনেমা কে বাণিজ্যিক সাফল্যের মঞ্চে তুলে ধরার জন্য বাংলা সিনেমা জগত তাকে আজও স্মরণ করে।
শ্রী সুদীপ্ত চন্দের উদ্যোগে এবং শ্যামসুন্দর জুয়েলার্সের পরিকল্পনায় প্রদর্শনীটি দেখার মতন ছিল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের কন্যা শ্রীমতি মুনমুন সেন ও নাতনি রিয়া সেন ছাড়াও সংগীত শিল্পী শ্রী সিদ্ধার্থ শংকর রায় (সিধু) ও অন্যান্য গুণীজনেরা।
সিনেমার হাতে আঁকা পোস্টার গুলি দেখতে দেখতে সে যুগের এবং সমসাময়িক সিনেমার পোস্টারের পার্থক্য চোখে পড়ে। বিজ্ঞানের অগ্রগতির ঢেউ সর্বত্র। ‘পথে হল দেরী’ (১৯৫৭) সিনেমার পোস্টার লাল রঙে ছাপা। উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেনের ছবি স্কেচ করা। ‘ইন্দ্রানী’ (১৯৫৮) ছবির পোস্টার আঁকা এবং রঙ্গীন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে সিনেমার পোস্টারের গুনগত মান বৃদ্ধি।
সিনেমার পোস্টারের কথা বলতে গেলে মহানায়িকার কথা দু একটি বলতেই হয়। ১৯৬৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘সাত পাকে বাঁধা’ মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের কর্মজীবনের একটি মাইলস্টোন। ওই বছর তৃতীয় মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘সাত পাকে বাঁধা’ সিনেমায় শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য রৌপ্য পুরস্কার পান। তিনি সর্বপ্রথম কোন ভারতীয় অভিনেত্রী যিনি আন্তর্জাতিক পুরস্কারে সন্মানিত হ’ন।একসময় তাঁকে বাংলা সিনেমার ‘গ্রেটা গার্বো‘ বলা হ’ত।
প্রদর্শনী দেখতে দেখতে একটি আক্ষেপ রয়ে গেল। মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘সাত নম্বর কয়েদী’ (১৯৫৩) কোন পোস্টার দেখতে পেলাম না। ‘সাত পাকে বাঁধা’ (১৯৬৩) সিনেমার পোস্টার দেখতে পাইনি বটে তবে দুধের স্বাদ কতকটা ঘোলে মেটানো সম্ভব হয়েছে ‘সাত পাকে বাঁধা’ সিনেমার লিফলেট দেখে।
১৯৫০ থেকে ১৯৫৯ সালের মধ্যে ‘ফিল্মফেয়ার’ পত্রিকার প্রচ্ছদে মহানায়িকার ছবিটি সংগ্রহে রেখেছেন শ্রী সুদীপ্ত চন্দ। তখন পত্রিকাটির মূল্য ছিল মাত্র ৭৫ নয়া পয়সা। ১৯৭৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর সংখ্যার ‘স্টার এন্ড স্টাইল’ পত্রিকার প্রচ্ছদের ছবি বা লাক্স সাবানের বিজ্ঞাপনে মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের ছবি (সাদা কালো), এইরকম দুর্মূল্য সংগ্রহ দেখে ভালো লাগলো।
প্রদর্শনীর জন্য বিশেষ পোস্টার ডিজাইন করেছেন দিল্লি নিবাসী অলংকরণ শিল্পী (ইলাস্ট্রেটর) শ্রী সিদ ঘোষ।
অবাধ প্রবেশের সুযোগ নিয়ে যাঁরা প্রদর্শনী টি দেখে এসেছেন, হলফ করে বলতে পারি হল থেকে বের হবার সময় তাদের কানে হয়তো তখনও গুনগুন সুরে বাজছে —
“তুমি না হয় রইতে কাছে
কিছুক্ষণ আরও না হয় রইতে কাছে
আরো কিছু কথা না হয় বলিতে মোরে……….।”
What's Your Reaction?
Raj Kumar Mukherjee - sexagenarian. A father, a husband and a son, who has finally let go of excelsheets and PowerPoints and picked up a pen instead. A child at heart, he reminisces his childhood days and wishes that the world was a better place for all of us. An avid reader and storyteller at heart, he is spending his retirement by reading books, experimental cooking (mostly failures!) and writing.