সিদ্ধার্থ ও যশোধরা- একটি প্রেম কাহিনী



Suman stays in Shyamnagar, West Bengal. Having keen interest in…
এ এক প্রেম কাহিনী। যে কাহিনীর শেষে মিলন হয় না থাকে শুধুই বিচ্ছেদ। আর বিচ্ছিন্ন থেকেও প্রেম কত নিবেদিতপ্রাণ হতে পারে, এ তার জ্বলন্ত উদাহরণ।
বুদ্ধ পূর্ণিমা গৌতম বুদ্ধের জন্মদিন একথা সকলেরই জানা। কিন্তু সম্ভবত অনেকের যা জানা নেই, তা হল গৌতম-পত্নী যশোধরার জন্মও বুদ্ধ পূর্ণিমাতেই হয়েছিল। যশোধরা এবং সিদ্ধার্থ ছিলেন সমবয়সী; দুজনের জন্ম একই দিনে হয়েছিল। সুপ্রবুদ্ধ কোলিয় গণরাজ্যের রাজা ছিলেন। যশোধরা ছিলেন সুপ্রবুদ্ধর কন্যা। যশোধরার মাতা প্রমিতা ছিলেন শুদ্ধোধনের ভগিনী। শুদ্ধোধন ছিলেন সিদ্ধার্থর পিতা। অর্থাৎ যশোধরা ছিলেন সিদ্ধার্থের পিসির মেয়ে।
যশোধরার তিনটি অপর নামও মেলেঃ
বিম্বাসুন্দরী, চন্দ্রমার বিম্বের ন্যায় সুন্দর হওয়ার কারণে; রাহুলমাতা, রাহুলের মাতা হওয়ার ফলে; ভদ্রা কাত্যায়নী, ভদ্র এবং কাত্যায়ন গোত্রের উপস্থিতির ফলে। প্রবজ্যার পরে অধিকাংশ ব্যক্তিই তাঁকে ‘ভদ্রা কাত্যায়নী’ বলে সম্বোধন করতেন। যাই হোক, তার চরিত্রের বিশেষ গুণ ছিল যে তিনি সেই যুগের নারী হওয়া সত্ত্বেও কখনোই সিদ্ধার্থকে এমনি এমনি যেতে দেননি, আবার জোর করে আটকান নি। কথিত আছে রাজা সুপ্রবুদ্ধ কখনওই তাঁর কন্যার বিবাহ গৌতমের সঙ্গে হোক, তা চাননি। না তিনি কখনও গৌতমকে যশোধরাকে ত্যাগ করার বিষয়ে ক্ষমা করতে পেরেছিলেন। জানা যায়, গৌতমের বুদ্ধত্ব প্রাপ্তির পরে তিনি সুরাপান করে তাঁর সঙ্গে লড়াই অবধি করতে আসেন।
যশোধরা এবং সিদ্ধার্থর কিন্তু প্রেমবিবাহ হয়েছিল। দুজনের বয়স যখন ষোল, তখন দুই পরিবারের পক্ষ হতে বিবাহে সম্মতি প্রদান করা হয়। তখনকার যুগে এই সমবয়সী বিবাহ কিন্তু বিরল। যাই হোক সিদ্ধার্থ কিন্তু যশোধরার প্রতি অনুরক্তই ছিলেন।তাদের মধ্যে বিবাদ বা পরিবাদের কথা কিন্তু শোনা যায় না। যশোধরা কখনও সিদ্ধার্থর সঙ্গে পরিবাদ করেছিলেন, এমনটাও শোনা যায়নি। কিন্তু কবির কল্পনায় কবিতামধ্যে বিবাদ-পরিবাদ ভরপুর। দুজনের মধ্যে নিরন্তর অনৈক্য, অশান্তি এবং যথার্থের প্রতি দুজনে অসত্য হয়ে যান। দর্শন অত্যধিক নিষ্ঠুর হয়ে ওঠে, সাহিত্য হয়ে ওঠে অত্যধিক ভাবপ্রবণ। সত্য মিথ্যা এক্ষেত্রে আমরা কেউই জানিনা।
মহাযানের জাতক কথা থেকে জানা যায়, যশোধরা বুদ্ধের পূর্ব কয়েকটি জন্মের সহচরী ছিলেন। সুমিত্রা এবং সুমেধের প্রেমগাথার মধ্যে দিয়ে কেটেছিল তাঁদের যশোধরা – সিদ্ধার্থ পূর্ববর্তী জন্মটি। তবে যা লেখা হয়েছে, তা হল যশোধরা নাকি জানতেন যে, গৌতম গৃহত্যাগ করবেন। রোহিণী নদীর বিবাদ সংক্রান্ত কারণে হয় তাঁকে দেশ থেকে নিষ্ক্রমিত করতে হতো, অথবা মৃত্যুদণ্ডের সম্মুখীন হতে হতো, নতুবা যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়াই ছিল অন্তিম উপায়। সিদ্ধার্থের মহানিষ্ক্রমণ এর সময়টিও নাকি ছিল অদ্ভুত, যেদিন সিদ্ধার্থ এবং যশোধারার একমাত্র পুত্র রাহুলের জন্ম হয় সেদিন সিদ্ধার্থ তার পুত্রকে দেখতে যান। তারপর তার মনে হয় তিনি যদি একবার তার পুত্রের মুখ দেখে ফেলেন হয়তো তিনি কখনই এখান থেকে বের হতে পারবেন না। তাই তিনি সেই মুহূর্তেই সেখান থেকে বেরিয়ে যান, একবারও নিজের স্ত্রী এবং পুত্রকে চোখের দেখা না দেখে। যশোধারা ঘুম থেকে উঠে শোনেন যে সিদ্ধার্থ আর সেখানে নেই।
একথা সকলেরই জানা আছে যে, যশোধরা ছিলেন সিদ্ধার্থে সমর্পিত প্রিয়া, পত্নী। রাজঘরানার মর্যাদায় অবগুণ্ঠনবতী এক বধূ। মায়ের দায়িত্ব পালন করে চলেছিলেন তিনি। কিন্তু তার বদলে কি পেয়েছিলেন তিনি হতাশা ছাড়া?! সিদ্ধার্থ তার মহানিষ্ক্রমণ এর পরে গৌতম বুদ্ধ হয়ে ৭-৮ বছর পরে ফিরে আসেন এবং পুত্র রাহুলকে নিয়ে বনে যান। কিন্তু স্ত্রীকে কিন্তু তিনি বোধিলাভ করান নি। এবং যা অল্পজ্ঞাত, তা হল যশোধরা কিন্তু বুদ্ধের সঙ্গে সঙ্গেই গৃহে বাস করে তপস্যা চালিয়েছিলেন। যখন, যেভাবে অনুচর, যাত্রীদের দ্বারা বুদ্ধের যে সাধনার কথা তিনি শুনতেন, তখনই তা করতে আরম্ভ করে দিতেন। মাটিতে শুতেন, কাষায় বস্ত্র ধারণ করতেন, অধিকাংশ দিন কাটত উপবাসেই।যশোধরা পরে গৌতম বুদ্ধের প্রবর্তিত ধর্মের ভিক্ষুণী হয়ে যান এবং আটাত্তর বছর বয়সে দেহত্যাগ করেন, অর্হত বা বুদ্ধ হয়ে।
দেখুন, গৌতম বোধি লাভ করে বুদ্ধ হলেন, কিন্তু যশোধরার স্মৃতি আমাদের মনে থাকলই না। যশোধরা না থাকলে কি বুদ্ধ হয়ে উঠতেন সিদ্ধার্থ? ইতিহাস কি যশোধারাকে প্রায় হারিয়েই ফেলল?! নাকি আমরা হারিয়ে যেতে দিলাম?!
তথ্য সংগ্রহ- Yashodhara and The Buddha
What's Your Reaction?

Suman stays in Shyamnagar, West Bengal. Having keen interest in literature, books, cinema, drama, sports & food. Now He writes for his own audiobook channel on YouTube named Rusteze Production.