১৫ই আগস্ট কি শুধুই স্বাধীনতা দিবস?



A devoted foodie with keen interest in wild life, music,…
১৫ ই আগস্ট স্বাধীনতা দিবস ছাড়াও এক অন্য মাহাত্ম্য আছে এই দিনে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্জী এবং ঋষি অরবিন্দ জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। তাদের শ্রদ্ধা জানিয়ে এই প্রবন্ধ যেখানে লেখক লিখেছেন কিভাবে এই দুই মহাপুরুষ তাদের কাজ দিয়ে লেখককে অনুপ্রাণিত করেছেন।
১৫ ই আগস্ট একটি বিশেষ দিন। না, স্বাধীনতা দিবস তো বটেই তা ছাড়াও এই দিনের অন্য মাহাত্ম্য আছে । এই দিনে আমার অত্যন্ত প্রিয় দুজন মানুষ জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তারা হলেন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য এবং ঋষি অরবিন্দ। কিন্তু ১৫ই আগস্ট এর উৎসবের ভিড়ে কোথাও যেন এই দুই মহাপুরুষের কথা আমরা ভুলে গেছি। কিন্তু তা করলে কি হয়। এই দুজন মানুষ আমার জীবনকে যে ভীষণভাবে প্রভাবিত করেছে তা বলা বাহুল। আজ হয়তো ঋষি অরবিন্দ না থাকলে আমি জীবন ধারার একটু অন্যরকম অভিজ্ঞতা জানতে পারতাম না, আর সুকান্ত না থাকলে ভাবনা চিন্তা গুলো হয়তো আজকের মত হতো না। তাই আজ তাদের শ্রদ্ধা জানিয়ে আমার ব্যক্তিগত কিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের কাছে তুলে ধরছি।
শুরু করা যাক সুকান্ত কে দিয়ে। আমার ছোটবেলাটা কাটে মেঘালয়ের রাজধানী শিলং শহরে। মনে পড়ে শিলংয়ে আনন্দ সম্মেলন বলে একটি অনুষ্ঠান আয়োজিত করা হতো। আনন্দ সম্মেলন ছিল বাচ্চাদের অনুষ্ঠান, বিভিন্ন ধরনের নাচ গান আবৃত্তি এগুলো নিয়ে বিকেলটা জমে থাকত। সম্ভবত শীতকালে না পুজোর আগে বা পুজোর পরে কোন একটা সময় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো । আজ লিখতে লিখতে সেই সময়ের একটা ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল । আমার দিদি তখন সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী আর আমি তখনো স্কুলে যায়নি। দিদি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ছাড়পত্র আবৃত্তি করে শোনাবে , আর আমি ছোটদের অন্য একটা কবিতা। জোর কদমে প্রস্তুতি চলছে, বাবা আমাদের দুজনকেই আবৃত্তি করা শেখাচ্ছেন, বাড়ির পরিবেশ রমরমা। প্রথমে আমাকে শেখাতেন তারপরে দিদিকে, এই করেই প্রত্যেকদিন সন্ধ্যেবেলাটা কেটে যেত।। আমার শেখা হয়ে যাওয়ার পরে আমি দিদির পাশে বসে থাকতাম এবং ওর আবৃত্তি করাটা শুনতাম, আর শুনে শুনে দিদির কবিতাটাও শিখে ফেলেছিলাম। এবার মজার কথাট হচ্ছে আমার কবিতাটা আমার মনে নেই , কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে আজও আমার ছাড়পত্র মনে আছে এবং ঠিক বাবা যেরকম শিখিয়েছিলেন সেই আঙ্গিকেই আবৃত্তি করি । তখন জানতাম না সুকান্ত ভট্টাচার্য কে বা কেমন কবি। পরে যখন বড় হলাম তখন কবিতাটির মানে বুঝতে পারি এবং বুঝতে পারি সুকান্ত ভট্টাচার্য কত বড় মাপের একজন কবি ছিলেন। আজ হলফ করে বলতে পারি ছাড়পত্র আমাকে উদ্বুদ্ধ করে, শেখায় আমায় স্বাধীনতা, চিন্তার উদ্রেক ঘটায়, ভাবতে শেখায় এবং যতবার পড়ি ছুয়ে যায় আমার হৃদয়।
নজরুল , Wordsworth, Tennyson এবং অন্যান্য গুণীজনেরা সকলেই শিশু কেন্দ্রিক কবিতা লিখেছেন। রবি ঠাকুর লিখে গেছেন ‘ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুদের অন্তরে ‘। কিন্তু সুকান্ত ছাড়পত্র কবিতাটি যে আঙ্গিকে লিখেছেন তা হয়তো অন্য কেউ লেখেননি। সুকান্ত বলেছেন মানুষের জন্ম তো শুধু কোন শহর বা দেশে নয়, জন্ম হয় বিশ্বে। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সঙ্গে শিশুর প্রাণের গভীর সম্পর্ক আছে তাই সে জন্মগ্রহণ করার পরে তার সুতীব্র চিৎকার দিয়ে তার অধিকার ব্যক্ত করে। আর তার এই অধিকারের বক্তব্য অনেকেই বোঝেন না কেউ হাসেন কেউ করেন মৃদু তিরস্কার। কবি কিন্তু তার ভাষা বুঝতে পেরেছিলেন। শিশুটি চেয়েছে এক নতুন সমাজ যেটা কবি তার মৃত্যুর আগে শিশুটিকে দিয়ে যেতে চান। কি অসাধারণ অভিব্যক্তি, ভাবা যায়?
এবার আসি আমার দ্বিতীয় প্রিয় মানুষ ঋষি অরবিন্দ। সত্যি কথা বলতে কি অরবিন্দ সম্বন্ধে আমি বিশেষ কিছু একটা জানতাম না, বাড়িতে The Life Divine নামক বইটি ছোট থেকেই দেখে এসেছি, কিন্তু পড়ার আগ্রহ হয়নি। কিন্তু কয়েক মাস আগে যখন পন্ডিচেরি বেড়াতে গেছিলাম আমি অরবিন্দ আশ্রম এবং Auroville যাই । সেই ভ্রমণ কাহিনীর বিস্তারিত আলোচনা আজ করবো না, বরং তার পর যা ঘটলো সেটা বলি। কলকাতা ফিরে এসে প্রথমেই যেটা করলাম সেটা হল অরবিন্দ The Life Devine টা পড়ে ফেললাম। এই বইটিতে, অরবিন্দ আধ্যাত্মিক বিবর্তনের একটি তত্ত্ব উপস্থাপন করেছেন এবং পরামর্শ দিয়েছেন যে মানবতার বর্তমান সংকট মানুষের আধ্যাত্মিক রূপান্তর এবং পৃথিবীতে একটি ঐশ্বরিক জীবনের আবির্ভাবের দিকে পরিচালিত করবে। সত্যি বলছি পড়ে মাথা ঘুরে গেল। সবকিছু নতুনভাবে ভাবলাম এবং জীবনধারায় কিছু কিছু জিনিস নিগমবদ্ধ করা শুরু করলাম, কারণ আমি মনে করি মহাপুরুষদের কে ভগবান রুপে পুজো না করে বরং তাদের শেখানো রাস্তায় আমরা যদি চলি সেটাই হবে পরম পূজো। সত্যি বলছি আজ অরবিন্দর শিক্ষা আমায় স্বাধীনভাবে ভাবতে শিখিয়েছে। স্বাধীন করে তুলেছে আমায় গোঁড়ামি থেকে। স্বাধীনতা কাকে বলে তার এক নতুন মানে খুঁজে পেয়েছি।
এই বলি শেষ করলাম আজকে, তবে দাড়ি টানার আগে একটা কথা বলতে চাই। পারলে এদের দুজনের সৃষ্টি করা জিনিসগুলো একটু পড়ে দেখুন, ভালো লাগবে।
What's Your Reaction?

A devoted foodie with keen interest in wild life, music, cinema and travel Somashis has evolved over time . Being an enthusiastic reader he has recently started making occasional contribution to write-ups.