“রূপকথার মতো”র কিছু সংক্ষিপ্ত অংশ
Saptarshi, a finance professional, has a camaraderie with his camera…
বইমেলায় প্রকাশ পেল “রূপকথার মতো”, বইটার কিছু সংক্ষিপ্ত অংশ রইলো পাঠক দের জন্য।
লেখক : সপ্তর্ষি রায় বর্ধন
গত শতকের তৃতীয় ও চতুর্থ দশক এই কাহিনীর পটভূমি| শহর কলকাতার তখন অন্য রূপ। নির্জন শহরের রাজপথে তখন ছিল না মানুষের ভীড়। নিস্তব্ধতা ভেঙে, চলে ফিরে বেড়ায় নানা কিসিমের মোটরগাড়ি আর তাদের সঙ্গে পাল্লা দেয় ঘোড়ায় টানা জুড়িগাড়ি। মেয়েটির মামাবাড়ি ছিল কলকাতার দক্ষিণে বালিগঞ্জ অঞ্চলে। বালিগঞ্জের চেহারা ছিল সেসময় অন্য ছাঁদের। তখন এ অঞ্চলটা মূলত ইউরোপীয়ান কোয়াটার্স। ছবির মত একটা সুন্দর জায়গা। বড় বড় বাংলো বাড়ি, লালমুখো সাহেবরা এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। হ্রেষার সঙ্গে মিশে থাকত অন্দরমহল থেকে ভেসে আসা পিয়ানোর মিষ্টি সুর আর বিলিয়ার্ডসের খটাস খটাস শব্দ। ব্রাইট স্ট্রীটের উপর দুই নম্বর বাড়ি, সে বাড়ির নাম ‘নদীয়া হাউস’। এই বাড়িতেই জীবনের শুরু সেই মেয়ের। বীরভূম জেলার হেতমপুর রাজপরিবার এবং নদীয়ার কৃষ্ণনগর রাজপরিবার যথাক্রমে তার পিতৃ ও মাতৃকুল। শুরু হয় তার জীবন কাহিনী যা এগিয়ে চলে গ্রীষ্ম,বর্ষা,শরৎ,বসন্তের চক্রাবর্তে। লাল মাটির বুকে, এক বিশাল রাজবাড়ির আনাচে কানাচে লেখা হয় মেয়েবেলার বারমাস্যা। কখনো বা সে পৌঁছে যায় কৃষ্ণনগর রাজবাড়ীর দুর্গাপূজায়। বিশাল ঠাকুর দালান থেকে ভেসে আসে ঢাক, কাঁসর ঘন্টার শব্দ, রাজবাড়ীর ত্রিসীমানা জুড়ে তার প্রতিধ্বনি ঘোরা ফেরা করে।
দেখতে দেখতে আসে মেয়ের বড়বেলা। চেনা চেনা মুখ আর চরিত্ররা ভিড় করে তার আসে পাশে; অনুভূতির সাগরে ঢেউ তোলে চেনা অচেনা সুখ দুঃখের টানাপোড়েন, খেলে যায় জোয়ার ভাঁটা! প্রিয়জন হারানোর ব্যথা আর নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয়ের মধ্যে দিয়ে সে সাবালক হয় দিনে দিনে। রাজবাড়ির অন্দর মহলে ঘটে যাওয়া না না ঘটনার সাক্ষী থেকে যায় সে। গ্রাম আর শহর কেন্দ্রিক জীবনের মিশেল এক ফল্গু ধারার মত বয়ে যায় তার চেতনে, মননে।
দেশ স্বাধীন হয়। তার চেহারা বদলে যায় এক রাত্তিরে। কলকাতা শহরে তখন রাস্তা জুড়ে অনাহারে মৃত্যু আর যুদ্ধ ফেরত বাঁকা টুপি সৈন্যের শীষে খান খান হওয়া রাতের শূন্যতা। প্রতিবাদী মিছিলে, স্লোগানে, আন্দোলনে ব্যারিকেড তৈরি হয় রাজপথে। আর ঠিক এই সময়ে সে মেয়ের সঙ্গে দেখা হয় আরেকজনের। সে এসেছে কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজে পড়তে মুর্শিদাবাদের লালগোলা থেকে। রাজ পরিবারের ছেলে সেও। ‘নদীয়া হাউস’ সাক্ষী থেকে যায় এদের দুজনের কাছে আসার। এক নতুন জীবনে পা রাখে সেই ছোট্ট মেয়ে।
তারপর সে একদিন ফিরে আসে তার চেনা গ্রামে। অবচেতনে স্মৃতিরা খেলা করে বেড়ায়; যেন প্রশ্ন করে “আমরা কি তোমার গত জন্মের বন্ধু? এ জন্মের কেউ নই, স্বজন নই? “ কালের যাত্রা এগিয়ে চলে।
দু দশক জুড়ে বলা এই কাহিনীর পিছনের মানুষটির, অর্থাৎ সেই ছোট মেয়েটির বয়স আজ ৮৯। অদ্ভুত এক জীবনী শক্তির আধার। রোগ ভোগ কে দুয়ো দিয়ে এই বয়সেও স্মৃতির অতল গভীর থেকে তুলে আনতে পারেন ফেলে আসা দিনের কথা, রঙবিরঙ্গি চরিত্রদের বিশ্লেষণ এবং তাদের সাপেক্ষ্যে, নিজ অবস্থানের সুলুক সন্ধান।
রূপকথা না হলেও আসলে এ যেন “রূপকথার মতো”!
রবীন্দ্রনাথ বলেছেন যে, যাকে আমরা খুব ভাল করে জানি তাকেও ফুটকি রেখায় জানি, অর্থাৎ কতকটা জানি, কতকটা জানি না। আমি কাহিনীকার হিসেবে বোধয় শুধু ফুটকি জোড়ার কাজটি করেছি। ভাল না খারাপ তার বিচারের দায় এবং দায়িত্ব পাঠকের, আমার নয়!
What's Your Reaction?
Saptarshi, a finance professional, has a camaraderie with his camera and pen as he tries to capture the wonderful light and sight along his way and write about the world and people around him.
The small section I read here, sounds like familiar sentences I read in other places. Very similar style of writing, choice of words, possibly will match word by word if you actually go deep. Must be too much influenced by other people’s creation. But let it go.