রথযাত্রা উৎসব ও দু’একটি কথা
Raj Kumar Mukherjee - sexagenarian. A father, a husband and…
আষাঢ় মাসে হিন্দু ধর্মালম্বী মানুষের কাছে একটা বড় উৎসব রথযাত্রা। শ্রীক্ষেত্র পুরীতে, মহাপ্রভু জগন্নাথ, বলভদ্র এবং সুভদ্রার রথযাত্রা। আজ সেই পূণ্য দিবসে রথযাত্রা নিয়ে দু চার কথা রাজকুমার মুখার্জির কলমে।
পুরান মতে মথুরার রাজা কংস, ভগবান কৃষ্ণ ও বলরাম কে বধের উদ্দেশ্যে ছল করে মথুরায় আমন্ত্রণ জানান। ভাগ্নে কৃষ্ণকে মথুরায় আনার জন্য অক্রুরকে রথ দিয়ে গোকুলে পাঠান। বলে পাঠান সেই রথে চড়েই যেন কৃষ্ণ এবং বলরাম মথুরায় আসেন। অর্থাৎ কৃষ্ণ এবং বলরামের রথযাত্রা ।
কৃষ্ণ ও বলরামের রথে চড়ে গোকুল থেকে মথুরা যাত্রার দিনকে ভক্তরা রথযাত্রার দিন বলে ধরে নিয়ে উৎসব পালন করেন। আমাদের দেশে, ভারতবর্ষে, পুরীর রথযাত্রা বিশ্বখ্যাত। আষাঢ় মাসের অর্ধচন্দ্র দিবসে রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।
ইতিহাস বলে ১১১২ সালে পর গঙ্গা বংশের রাজা অনন্ত বর্মন গঙ্গার দ্বারা পুরীর জগন্নাথ মন্দির নির্মিত হয়েছিল। মন্দিরের রেকর্ড বলে মন্দিরটি ১৮ বার লুট করা হয়েছে।
এবার রথযাত্রা নিয়ে দু একটা কথা বলি। জগন্নাথ দেবের রথের নাম নন্দীঘোষ। রথের সারথি মদন মোহন। রথ পাহারা দেন গড়ুর। জগন্নাথ দেবের পছন্দের রং হলুদ এবং লাল কাপড়ে সাজানো হয় রথ। জগন্নাথ দেবের সঙ্গে রথে অধিষ্ঠিত থাকেন বরাহ, গোবর্ধন, কৃষ্ণ, গোপীকৃষ্ণ, রাম, নারায়ণ, হনুমান, রুদ্র।
বলভদ্রের রথের নাম তালধ্বজ। নীল লাল এবং সবুজ রঙের কাপড় দিয়ে সাজানো থাকে রথ। রথের সারথি থাকেন মাতালি। রথে বলভদ্রের সঙ্গে থাকেন গণেশ, শেশাদেব, মুক্তেশ্বর, নটম্ভরা, মৃত্যুঞ্জয়, সর্বমঙ্গলা এবং কার্ত্তিক।
সবচাইতে ছোট রথটি হলো জগন্নাথ দেবের বোন সুভদ্রার। সুভদ্রার রথের নাম দর্পদলন। লাল এবং কালো রংয়ের কাপড়ে সাজানো। রথের সারথি হলেন অর্জুন। রথে সুভদ্রার সঙ্গে থাকেন বিমলা, মঙ্গলা, শ্যামাকালী,বরাহি, বনদুর্গা, উগ্রতারা, চামুন্ডা এবং চন্ডী।
পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দির থেকে গুন্ডিচা মন্দিরের দূরত্ব মাত্র ৩ কিলোমিটার। এটাই রথের যাত্রা পথ। ন’দিন বাদে আবার জগন্নাথ দেব এবং বলভদ্র ও সুভদ্রা গুন্ডিচা মন্দির থেকে নিজেদের মন্দিরে ফিরে আসেন। যাকে আমরা বহুদা যাত্রা বা উল্টোরথ যাত্রা বলি। নিজের মন্দিরে ফিরে আসার সময় জগন্নাথ দেব মাসির বাড়ি ঘুরে আসেন। সেখানে পোড়া পিঠের ভোগ নিবেদন করা হয়। এরকম একটা ধারণা আছে যে পোড়া পিঠে গরীব লোকের খাদ্য এবং জগন্নাথ দেবের অতি প্রিয়।
পুরীর রথযাত্রা ছাড়াও পৃথিবীর বহু জায়গায় বিখ্যাত রথযাত্রার উৎসব পালিত হয়। পশ্চিমবঙ্গের মাহেশের রথযাত্রা, ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীনতম রথযাত্রা এবং বাংলার প্রাচীনতম রথযাত্রা। চতুর্দশ শতকে বাঙালি সাধু ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারীর হাত ধরে মাহেশের রথযাত্রা শুরু। মাহেশের রথ নিয়ে প্রচুর গল্প আছে। জগন্নাথ দেবের স্বপ্নাদেশে মাহেশে মন্দির স্থাপন ও রথযাত্রা উৎসবের সূচনা হয়। ১৭৫৫ সালে কলকাতার নয়নচাঁদ মল্লিক মাহেশের বর্তমান জগন্নাথ মন্দিরটি স্থাপন করেন। এছাড়াও বাংলার বহু জায়গায় বহু গণ্যমান্য ব্যক্তিরা রথযাত্রার উৎসব শুরু করেছিলেন।
আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ চেতনা সমাজের (ISKCON – International Society for Krishna Consciousness) হাত ধরে পৃথিবীর বহু দেশে রথযাত্রা উৎসব পালন হয়। রথযাত্রা উৎসব একপ্রকার ভাতৃত্ববন্ধনের উৎসব বলে ধরা যায়।
রথযাত্রার শুভ দিনে ইস্ট ইন্ডিয়া স্টোরির পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে আমাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা।
What's Your Reaction?
Raj Kumar Mukherjee - sexagenarian. A father, a husband and a son, who has finally let go of excelsheets and PowerPoints and picked up a pen instead. A child at heart, he reminisces his childhood days and wishes that the world was a better place for all of us. An avid reader and storyteller at heart, he is spending his retirement by reading books, experimental cooking (mostly failures!) and writing.