মোহন সুব্বার হোমস্টে



A physics teacher who is also a passionate traveller and…




আমাদের দেশে অতিথি আপ্যায়নের প্রথা বহু কাল ধরে চলে এসেছে এখনকার যুগে যার নতুন নামাকরণ হয়েছে হোমস্টে । তবে আজ যে গল্পটি আপনাদের কাছে আবির তুলে ধরেছে সেটি সেই প্রাচীন প্রথাকে মনে করিয়ে দেবে। পড়ে দেখুন।
গত পর্বে আপনাদের বলেছিলাম বাদানটাম Live in Nature হোমস্টে র মোহন সুব্বাজির গল্প। এই পর্বে আমাদের বাদামটাম ভ্রমণ আর হোমস্টে সমন্ধে সব তথ্য এবং আমাদের ওখানকার অভিজ্ঞতা আপনাদের কাছে তুলে ধরছি । আর তার সাথে আপনাদের জানাবো এরকম একটি জায়গায় থাকার খরচ কত করে ছিল আমাদের।
এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো, এখানে থাকার খরচা কিন্তু খুবই কম। শিলিগুড়ি জংশন থেকে দার্জিলিং এর শেয়ার গাড়ির ভাড়া আড়াইশো টাকা পার হেড, রোহিনীর রাস্তা ধরে পাহাড়ে উঠতে শুরু করতেই মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে গেল। কিছুটা উঠেই গাড়ি থামলো একটি স্থানীয় দোকানে, চা জল খাবারের জন্য। এই দোকান কাম রেস্টুরেন্টের বারান্দাটি অসাধারণ সুন্দর। স্টেশনে মোমো খেয়ে অলরেডি পেট ভর্তি ছিল, তাই শুধু দু কাপ চা খেলাম ওখানে দাঁড়িয়ে।
দার্জিলিং পৌঁছানোর শেষের কিছুটা রাস্তায় বেশ জ্যাম ছিল, তাই পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা লেগে গেল। মোহন জি ঐদিন একটি বিশেষ কাজে দার্জিলিং এসেছিলেন, তাই আমাদের জানিয়ে রেখেছিলেন যে উনি আমাদের সাথে একসাথেই ফিরবেন তাই রাস্তা চেনার ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা হবে না। দার্জিলিং ট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকেই বাদামটামের শেয়ার গাড়ি ছাড়ে যার ভাড়া 70 টাকা এবং যেতে সময় লাগে এক থেকে দেড় ঘন্টা।
দার্জিলিং এর ভিড় পেরিয়ে কিছুদূর এগোতেই শুরু হয়ে গেল ফাঁকা গাছপালা পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে দিয়ে যাত্রা। গাড়ি আমাদের নামালো বাদামতাম জিরো পয়েন্টে। এরপর আর গাড়ি যায় না বাকি রাস্তাটুকু হেঁটে যেতে হবে, আর হাটাও খুব কম নয়। আমরা যেহেতু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেখতে পাকদন্ডী বেয়ে বেয়ে নামছিলাম এবং পাহাড়ের ঢাল বেয়ে শটকাট রাস্তা নিইনি, তাই অনভ্যস্ত পায়ে পুরোটা নামতে প্রায় সময় লাগলো 40 মিনিট। নামার পথেই বুঝলাম ওঠার সময় এতটা রাস্তা পিঠে ভারী ব্যাগ নিয়ে ওঠা খুবই কঠিন। মোহন জি কে বলতে উনি আশ্বস্ত করলেন যে ফেরার দিন যদি এক্সট্রা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা খরচা করি তাহলে শেয়ার গাড়ি মাটিপাথরের রাস্তা বেয়ে একদম হোমস্টের সামনে থেকে আমাদের পিক আপ করবে। এমনকি নামার সময়ও এটা করা সম্ভব ছিল, তবে অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষদের ক্ষেত্রে এই রাস্তাটি হেটে নামতে খারাপ লাগবে না।
এতটা নেমে খিদে পেয়ে গিয়েছিল প্রচন্ড, মালপত্র রেখেই কোনক্রমে ফ্রেশ হয়ে চলে এলাম লাঞ্চ করতে। উনার বাড়ির সাথে লাগুয়া kitchen কাম ডাইনিং এরিয়াতে বসে খেয়ে নিলাম । মোহনজির স্ত্রী যশোদা দিদির বানানো অসম্ভব সুস্বাদু খাবার দাবার। তারপর ভালো করে ঘুরে দেখলাম ওনার পুরো বাড়িটি। আমাদের ভাগ্য এতই ভালো যে ওনার বাড়িতে আমরা ছাড়া আর কোন অতিথি ছিল না।
মোহন জির বাড়িতে চারটি ঘর, যার মধ্যে একটিতে ওনারা নিজেরা থাকেন। আর অন্য তিনটি বর্তমানে ভাড়া দেওয়া হয়। এগুলির মধ্যে একটি ওনার ছেলের, এবং একটি মেয়ের ঘর। আর অন্য ঘরটি গেস্ট রুম। বর্তমানে ওনার ছেলে এবং মেয়ে উভয়ই কর্মসূত্রে বাড়িতে থাকে না বলে, তিনটি ঘরই হোমস্টে হিসেবে বুক করা হয়। আমরা বেসেছিলাম সবচেয়ে ছোট ঘরটি, এটি ওর মেয়ের। ঘরের চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে তার শৈশব এবং কৈশোরের বিভিন্ন স্মৃতি যা দেখে খুবই হোমলি ফিল হচ্ছিল। ছোট একটি ডাবল বেড আর তার সাথে লাগোয়া জানালা, যে দিক থেকে সকালের সূর্যের রোদ এসে পড়বে ভোরবেলা।
বাকি রুমগুলিও দেখলাম, বেশ সুন্দর। ওর ছেলে যেহেতু ফুটবলার তাই তার ঘরে ছড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন ট্রফি। রান্নাঘর কাম ডাইনিং রুম টি হোমস্টের কম্পাউন্ড এর মধ্যে কিন্তু অ্যাটাচড নয়, এমনকি এখানে কিন্তু টয়লেট ও অ্যাটাচড নয়, তবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। তবে মোহন জির বাড়ির মধ্যে যেটা সবচেয়ে সুন্দর জায়গা অর্থাৎ যার কথা না বললেই নয় সেটি হল বেশ বড়সড়ো একটি চৌকো কাঠের বারান্দা। এই বারান্দার দু’ধারে পাতা আছে দুটি বেঞ্চ, আর মাঝে একটি টেবিল রাখা। বেঞ্চগুলোর সাইজ এমনই যে সন্ধ্যেবেলা এখানে বসে এই মোহন জির সাথে আড্ডা মারার সাথে দিনের বেলা ক্লান্ত শরীরে ময়ূরের ডাক শুনতে শুনতে আর ফুরফুরে হাওয়া খেতে খেতে একটু শুয়েও নেওয়া যায়। আরো আছে কি জানেন ? একটি রকিং চেয়ার, এটিও বেশ সুন্দর।
প্রথম দিন পৌঁছে এতটা জার্নি করার পর এতই ক্লান্ত ছিলাম যে আর কোথাও গেলাম না। ঘুরে দেখলাম বাড়ির চারপাশ, মোহন জির নিজস্ব মুরগি এবং শুকরের ফার্ম আর তার সাথে মুরগির বাচ্চাদের খাবার খেতে দেওয়া। আর আলাপ হলো পুন্ডি আর কালীর সাথে, একটি বাচ্চা কুকুর এবং একটি বিড়াল। নাম কালি হলেও ওর গায়ের রং কিন্তু সাদা। সুন্দর গ্রাম্য পরিবেশে প্রকৃতির নৈসর্গিক রূপ উপভোগ করতে করতে কেটে গেল প্রথম দিনটা।
এবার খরচের কথায় আসি, মোট তিন দিন তিন রাত দুজনের থাকা-খাওয়া মিলিয়ে আমাদের পড়েছিল মোট ৩৫৩০ টাকা, যেটা ভাবনার বাইরে। আর তার সাথে ছিল অসম্ভব ভালো কোয়ালিটির খাবার। পরের দিনগুলি কোথায় কোথায় গেলাম আর কি কি করলাম তা জানাবো পরবর্তী পর্বে। আপাতত এখানে মোহন জির ফোন নাম্বারটি শেয়ার করছি আর তার সাথে আমাদের ঘোরাঘুরির কিছু ছবি এবং এই সম্পর্কিত ডিটেইলড ভিডিও এখানে শেয়ার করছি।
মোহন সুব্বা – 7384611343
Also read the first part : –
মোহন সুব্বা – এক অচেনা পাহাড়ি
What's Your Reaction?

A physics teacher who is also a passionate traveller and photographer, spends his time reading fictional books and watching movies. Abir's unique perspective, combined with his expertise in Physics, adds depth and complexity to his photographic work.