Now Reading
চিঠিপত্র – ভাগ – ৩

চিঠিপত্র – ভাগ – ৩

Avatar photo
man writing love letter

চিঠিপত্রের আদান-প্রদান চলছে। এই পর্বে প্রেমের এক আলাদা অনুভূতি শায়কএর কলমে।

ভাগ – ৩

চিঠিপত্র-৬

প্রিয়,

অনেকদিন পর চিঠি দিচ্ছি। জন্মদিন কাটার পর প্রথম কলমে হাত দিতেই মনে হল তোকে চিঠিখানা লিখেই ফেলি। জিজ্ঞেস করছি না কেমন আছিস ইত্যাদি ইত্যাদি। যে বিশ্বাসে মানুষ ঘুমোতে যায় যে পরদিন সে ঘুম থেকে উঠবেই সেই বিশ্বাস থেকেই আমি বিশ্বাস করি তুই ভালো আছিস, সুখে আছিস।

সুখ তোর বরাবরি ভালো লাগে। আমার প্রিয় ছিল অসুখ। তাই তোর জন্য কিনারাহীন সুখের নদী খোঁজাটাও আমার অসুখের মধ্যেই পড়ে গেছিলো। জানি খুব প্যানপ্যানাচ্ছি। আসলে কাল জন্মদিনটা কেটে যাওয়ার পরেই মনে হল অর্ধেকটা জীবন পার করে ফেললাম। অর্থাৎ আগামী অর্ধেকটা তোকে নিয়েই কাটাতে হবে। আজকে আর কিছুই ভালো লাগছে না। এই অপরিচিত লোকজন এই স্যাঁতস্যাঁতে কাল ঠাণ্ডা, সাদা সাদা ভাবলেশহীন মুখগুলো। কেমন মনে হচ্ছে মৃত্যুপুরীর সামনে দাঁড়িয়ে আছি। তোর শহরেতো এখন বসন্ত। পলাশের গায়ে রঙ ধরেছে। ইচ্ছে করছে সব ছেড়েছুড়ে একছুট্টে চলে যাই তোর কাছে। তোর চুলের গন্ধে মাতাল হই আবার। অনেক কথা জমে আছে। সেগুলো তোর কপালে চোখে ঠোঁটে গালে খোদাই করি উন্মাদ ভাস্করের মতো। একসাথে ফুচকা খাই খুব ঝাল দিয়ে। তারপর তুই সারা রাস্তা হাঁটবি শিসোতে শিসোতে আর সব দোষ আমার ঘাড়ে। ব্যাজার মুখে গুণতে হবে তোকে ঝাল খেতে না বলার মাসুল। কে জানে বয়স বাড়লে বোধহয় পুরুষ ন্যাকা প্রেমিকে রূপান্তরিত হয়।

যাকগে। কাল বহুদিন পর তোর পছন্দের নীল পাঞ্জাবীটা পড়েছিলাম। যেটা দেখে কান টেনে “আয় আমার নীলকমল” বলে কাছে টেনে চুমু খেয়েছিলি। ভালো কথা সিগারেটটা ছাড়তে পারিনি এখনো। অতএব একটু মানিয়ে নিস গন্ধটা। সমস্ত বিখ্যাত চিত্রনাট্যেই এটুকু ভুল থাকে।

-সায়ক

 

চিঠিপত্র-৭

প্রিয়,

আমার শহরে প্রিয় বসন্তকাল। সকাল থেকে কোকিল তারস্বরে চেঁচাচ্ছে থুরি গান ধরেছে। আসলে জানিসই তো যা একঘেয়ে তাই আমার কাছে বরাবরই অপ্রিয়। কোকিলের ডাকও তাই আমাকে খুব বেশি স্পর্শ করেনা। তার চেয়ে বরং ঘুঘুর ডাক অনেক ভালো। একটা শান্ত দুপুরের হাতছানি আছে, একটা ছন্দ আছে। এবং ব্যাটা বড্ড ডাউন টু আর্থ, মানে কোকিলের মতো অত দাম্ভিক লাগেনা আরকি।

তবু আমার শহরে প্রিয় বসন্তকাল। রক্তপলাশ, কৃষ্ণচূড়ায়। দোল আসছে রঙের দিন। কিন্তু দ্যাখ আমি আবার এই বছরেও রঙ মাখবোনা। কার হাতে মাখবো বল? তুইতো নেই কাছে। কে অত যত্ন করে রঙ মাখাবে! “তুই কাছে নেই তাই বিচ্ছিরি লাগে দিন বিচ্ছিরি লাগে রাত।” আর বসন্ত? সেতো আমার কাছে দুয়োরাণীর মতো আমার ঘরের এক কোণে পড়ে আছে।

তবু আমার শহরে প্রিয় বসন্তকাল। পার্কের কোণে, লেকের ধারে, ভিক্টোরিয়ার সবুজ ঘাসে প্রেমিক প্রেমিকাদের ভিড়। দেখলে মনে হয় আমরাও ছিলাম ওদের মতো। সেইদিনটা মনে পড়ে? আমি দেড় ঘণ্টা লেট করে গেছিলাম তোর সাথে দেখা করতে? দূর থেকেই তোর থমথমে মুখটা দেখতে পেয়ে প্রমাদ গুনেছিলাম, আজকে বজ্রবিদ্যুতসহ ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। হলও তাই। আমি পৌঁছানমাত্র আমার কেয়ারলেসনেসের ওপর মিনিট পনেরো ধরে ফিরিস্তি দিয়ে দিলি।তারপর তোর জন্য এক মুঠো রক্তপলাশ বার করে দিতেই ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেললি। নিজেকে তস্য বোকা প্রাণীটা লাগে সেইসব সময়ে। তারপর পাঞ্জাবীর কলারটা ধরে চুমু খেলি হঠাৎ! ভাগ্যিস আশেপাশে ক্যাচাল পাবলিক ছিলোনা। তোর লজ্জা অভিমান মেশানো কান্নায় ঘেঁটে যাওয়া কাজল পরা চোখটা দেখতে দেখতে কেমিস্ট্রি ল্যাব বোরিং লেকচার মিছিল শ্লোগান স্ট্রাগল ভিড় বাস বাবার শাসন সব ভুলে যেতে লাগলাম…শুধু মাথার ভেতর ঘুরতে লাগলো “প্রহরশেষে রাঙা আলোয় সেদিন চৈত্রমাস, তোমার চোখে দেখেছিলেম আমার সর্বনাশ”।

ইতি

প্রিয়

-সায়ক

 

See Also
Ghosts don’t exist, you know why?

চিঠিপত্র-৮

প্রিয়,

নতুন পাঞ্জাবীটা পেলাম। এবং খুলে দেখি যথারীতি নীল। এটা কিন্তু বড্ড একচোখেমি হয়ে যাচ্ছে। মানে আমাকে নীল ছাড়া অন্য রঙেও ভালো লাগে এটা বিশ্বাস করা উচিৎ তোমার।বয়সতো অনেকটাই পেরুলো। ছোটবেলায় বলেছিলে নীলটা আমার থাকুক তোমার অন্যান্য সখীরা বাকি রঙ নিক। শুধু বুঝতে পারলে না আমি আমার সব রঙই তোমাকে দিতে চেয়েছিলাম।

যাজ্ঞে দেখেছো? কলেজ জীবনের কাসুন্দি ঘাঁটতে বসে গেলাম। নাঃ তুমি সিউডো কমিউনিস্ট বলে গাল পাড়ার আগে তোমায় বিজয়ার শুভেচ্ছাটা জানিয়ে রাখি। শুভেচ্ছা।আচ্ছা সেই দুর্গাপুজোর কথা মনে আছে? সারা অষ্টমীর রাতটা আমরা যথেচ্ছ মাতলামি করেছিলাম। মানে এতোটাই মাতাল ছিলাম যে একা ঘরে তোমাকে পেয়েও চুমু খেতে পারিনি। সারারাত নাকি তোমাকে বেসুরে “আমার পরান যাহা চায়” শুনিয়ে গেছিলাম আর শেষরাতে তোমাকে জড়িয়ে আমার কষ্ট হচ্ছে বলে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে ভাসিয়েছিলাম। তবে পরদিন সকালের মতো অতো সুন্দর সকাল আমার জীবনে আসেনি। কাছেই কোনো মণ্ডপ থেকে ঢাকের আওয়াজ ভেসে আসছিলো। রোদ চুঁইয়ে পড়ছিল জানলা দিয়ে। আর সেই চুঁইয়ে পড়া রোদে তোমার ঘুমন্ত মুখটা পদ্ম পাতার মতো টলটল করছিলো। মুহূর্ত থমকে গেছিলো জানলার বাইরে। তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছিলো দিন রাত কাল ভ্রষ্ট হই… নষ্ট হই।

ইতি

প্রিয়

পুনশ্চঃ সাদা জামদানী পাঠালাম। পোরো।

-সায়ক

What's Your Reaction?
Excited
3
Happy
2
In Love
0
Not Sure
0
Silly
0
View Comments (0)

Leave a Reply

Your email address will not be published.


Scroll To Top