Now Reading
চিঠিপত্র – ভাগ – ১

চিঠিপত্র – ভাগ – ১

Avatar photo
Inland Letter and postcardslying on the table

বর্তমানে, ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোন যোগাযোগ কে সহজ করে তুলেছে। তবে একটি প্রেমপত্রের আবেগ তুলনাহীন। সায়ক ঘোষ এই অনুভূতিটাকেই তুলে ধরেছেন এই গল্পে।

ভাগ – ১

চিঠিপত্র-১

 

প্রিয় …,

অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম শব্দ নিয়ে নতুন একটা খেলা খেলবো। সেই ঝোঁকের বশেই ভাবলাম তোমায় নতুন করে চিঠি লেখা শুরু করি। তুমিও বহুদিন ধরে আভিমানি রাগ দেখাচ্ছিলে, তোমার ঠিকানায় আর আমার চিঠি যায়না বলে। ভাবলাম এই ভালো। তোমার অভিমানের ওপর কিছুটা অক্ষরের প্রলেপ দেওয়া যাবে, আবার আমার এক আকাশ লেখার বাসনাটাও পূর্ণ হবে। এটা অনেকটা এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতন না? হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ…সে দোষ তুমি আমায় দেবে জানি…তবে ঐ যে কথায় আছে না? যুদ্ধে আর প্রেমে সবই সত্য…। (হাসি)

এতক্ষণ পড়ে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছো আমার পাগলামিটা আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। আসলে তোমাকে আবার নতুন করে পেতে ইচ্ছে করছে, দেখলে? এখানেও সেই রবীন্দ্রনাথ

তোমায় নতুন করে পাব বলে

হারাই ক্ষণে ক্ষণ

ও মোর ভালবাসার ধন”

হ্যাঁ, মুখে রাগ আর বুকে অনির্বচনীয় প্রেম নিয়ে তুমি যে ফাঁদ পেতেছিলে আমি তাতে ধরা পড়েছি। সে ফাঁদের কিনারায় বসে তুমি উন্মাতাল জীবনের মন্ত্র শিখিয়েছিলে। যে মহুয়া বনের গান শুনিয়েছিলে আমি তারই স্বরলিপি লিখে রাখবো আমার চিঠিতে। আমি জানি তুমি লজ্জা পাবে; আর যতবার লজ্জায় রাঙা হবে তোমার মুখ ততবার জানবে আমার বাড়ীর পাশের পলাশ গাছে নতুন কুঁড়ি এসেছে…।।

মৃত্যু এসে ফিরে যাক-

এত প্রেম দিলাম তোমায়।

-ইতি

চিঠিপত্র-২

 

প্রিয় …,

তোর চিঠি পেলাম। এখনো হাতেই ধরা আছে। অক্ষরগুলো আঙ্গুল ছুঁয়ে মনে হল বহুদিন পর তোর হাত ছুঁয়ে বসে আছি। এ যেন বটের শিকড়। পাকে পাকে জড়িয়ে ধরে তোকে। বিশ্বাস কর এখনো তোকে জড়িয়ে ধরে দিন মাস বছর অবহেলায় পার করতে পারি।

কেন জানিনা আজ তোকে বিভিন্ন নামে ডাকতে ইচ্ছে করছে। কেমন হয় আজ যদি তোকে আষাঢ়ের প্রথম বৃষ্টি বলে ডাকি? সোঁদা গন্ধ গায়ে মাখবি? কিংবা ধর যদি কাঠগোলাপ ডাকি? সাদার মায়ায় বশ করবি? অথবা ধর যদি রোদেলা ডাকি? শীতের দুপুরে খেলবি জানলার গরাদের ফাঁকে?

আমি অনেক কিছুই পারিনা। তারমধ্যে অন্যতম না পারাটা হল তোকে ছাড়া থাকতে। আজ তা হাড়ে মজ্জায় টের পাই। জ্যোৎস্না বললে আর খোয়াই মনে পড়ে না। শ্মশান মনে পড়ে। সেবার বড় জেঠুকে নিয়ে গেছিলাম দাহ করতে। সেদিন খুব মন দিয়ে চাঁদটা দেখেছিলাম আর শুনেছিলাম বাবার দীর্ঘশ্বাস, হয়তো শেষবারের মতোই। এবার ফিরে খোয়াই যাব একসাথে। পূর্ণিমাতেই। তোর গলায় আরেকবার শুনতে “আজ জ্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে”। মৃত্যু কার ভালো লাগে বলতো? আমরা চিতা বানাবো; দাহ করবো পরস্পরকে…অগ্নি হব পর্ণমোচী শীতে। জ্বলবো পরস্পরের ঠোঁটের চৌকাঠে।

-ইতি

চিঠিপত্র-৩

 

See Also
Heartroot Tree

প্রিয় …,

আজ অদ্ভুতভাবেই কোন সম্বোধন ছাড়াই লিখতে আরম্ভ করে দিলাম। এই বিশ্বাসে, তুইতো জানিসই আমার দেওয়া ঐ ডাকনাম। বিশ্বাস! হ্যাঁ তার ওপর ভর করেই তো বেঁচে আছি। এই দ্যাখনা এই যে চিঠি, সেটা তোর ঠিকানায় পৌঁছবে এবং কাগজ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আগে তোর বইয়ের ভাঁজে শোভা পাবে; তার বদলে কোনো মুদির দোকানে একশ গ্রাম শুকনো লঙ্কার ধারক এবং বাহক হবেনা। ওই যে কথায় বলে না, “বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর”।

দুত্তেরি। আজকে হঠাৎ বিশ্বাস নিয়ে পড়লাম কেন কে জানে! আসলে এই ত্রিশ ছুঁই ছুঁই বয়সে এসে বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের ভেতরে মাইরি পুরো পেন্ডুলাম হয়ে গেছি। কি বিশ্বাস করবো আর কাকেই বা অবিশ্বাস করবো বুঝে উঠতে উঠতে ব্যাকডেটেড লিস্টে নাম লিখিয়ে ফেলছি প্রায়শই। এই যেমন ধর ঠাকুরে বিশ্বাস করিনা জেনে বন্ধুরা লক্ষ্মীপূজোর নেমন্তন্ন থেকে ছাঁটাই করে দিল। মার্কসে বিশ্বাস করলাম বলে বেরসিক বলে আড্ডা থেকে ছাঁটাই হয়ে গেলাম, এরকম আরো কত কী! তবু বিপ্লব আসবে একদিন এই বিশ্বাসে মিছিলে হেঁটে চলেছি অনন্ত পথ..।।

যাকগে বিশ্বাস রেখেই এই চিঠি লিখে চলেছি। প্রেমপত্র কিনা ঠিক জানা নেই। শেষ কবে তোর সাথে হাতে হাত ধরে, নিরিবিলি লেকের ধারে হঠাৎ চুমুতে ওই সো কলড প্রেমটা করেছিলাম তা ভুলে যেতে বসেছি। লিখে চলেছি তোকে খুঁজে পাওয়ার জন্য, নিজের মনের ভেতরে তোকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। সেই কে একজন বলেছিল

“বিশ্বাস থাকলে, ভালোবাসা থাকে মৃতদেহেও

মন্ত্রপাঠ করিনি, তবু জানি অনতিদূরে আছে ঈশ্বরও…”।।

-ইতি

 

থাকুক একটু অপেক্ষা..

What's Your Reaction?
Excited
6
Happy
2
In Love
0
Not Sure
0
Silly
0
View Comments (0)

Leave a Reply

Your email address will not be published.


Scroll To Top