কলার জন্য কুরুক্ষেত্র



A devoted foodie with keen interest in wild life, music,…
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার আশায় চট্টবাবু রোজ একটা কোরে কলা খান। আর ঐ কলা খেতে গিয়ে বাঁধে এক নতুন কুরুক্ষেত্র।
লেখক : সোমাশীস গুপ্ত | প্রচ্ছেদ : সিড ঘোষ
চট্টবাবু চট করে চটেন না, কিন্তু সেদিন, চটাং করে চটে গিয়ে বললেন “বস্তা খালি কেন? কলা কই?”
চট্টরুপ চট্টরাজ কোথাও একটা শুনেছিলেন যে কোষ্ঠকাঠিন্যর প্রধান ঔষধি হল কলা, আর সেই থেকে কলা না খেলে তার পাচনতন্ত্র বিকল হয়ে পড়ে। তার ওপর আজ পেটে যা খিল, তাতে হল মহা মুস্কিল। এই অবস্থায় কলা না খেলে যে কেলো হয়ে যাবে তা বলাই বাহুল্য।
এদিকে বাবার গর্জন শুনে, চট্টবাবুর ছেলে, ঝন্টু ঝট করে বলে উঠল “বাবা কল তো আজ তিন দিন হল খারাপ।”
চট্টবাবু রেগে মেগে বললেন “ওরে গাধা আমি কলার কথা বলছি, বস্তা-তে যে এতোগুলো কলা ছিল সেগুলো কই?”
ঝন্টু কাঁচু মাচু হয়ে মাথা চুলকানি শুরু।আর তাই দেখে চট্টবাবু আরও রেগে গিয়ে বললেন “ওরে চুপ করে থাকিস না। Talk Jhantu, talk”
“বাবা আঙ্গুর ফল, কমলা লেবু, মুসম্বী এই গুল জানি টক, কিন্তু কলা আবার টক হল কবে?”
শুনে চট্টবাবু ঝন্টু কে এই মারে কি সেই মারে। এদিকে ঝন্টুর মা, মাড় গালতে গালতে বললেন, “ওকে না মেরে বাজার থেকে কলা নিয়ে এসো গে যাও।”
নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে চট্টবাবু বাজারের দিকে দিলেন ছুট। ছুটির দিনে ছুটে না গেলে হবে না, কলা তাকে খেতেই হবে। ঝন্টুর মা আবার সকল সীমা ছাড়িয়ে করলেন ইলিশ এর ফরমাইশ। উনি তো আর বাজার দর জানেন না। এই বাজারে ইলিশ? কি ফুলিশ!
বাজার যাবার পথে দেখা হল তারিণী বাবু সাথে ।তাড়াতাড়ি করে Good Morning বলে চলে যাবেন ভেবেছিলেন, কিন্তু তখনি তারিণী বাবুর প্রশ্ন “এত তাড়া কিসের ? তারা দেখতে যাবেন বুঝি?”
শুনে চট্টবাবু থমকে দাঁড়ালেন, “মস্করা হচ্ছে? দিনের আলো তে তারা?”
“আরে মশাই এই তারা সেই তারা নয়, এরা হলেন আমাদের পৃথিবীর তারা মানে film stars, শোনেননি তারাপুরের মাঠে এখন তারাদের বাহার, shooting চলেছে যে।“
“ওঃ তাই বলুন। না মশাই আমি চললুম বাজারে” বলে আবার চলা শুরু করলেন চট্টবাবু ।
বাজারে পৌঁছে সবই কেনা হল, ইলিশ মাছ, কচুর লতি, সাদা সরষে, এবার কলার পালা।
ফলওয়ালা বরুন তখন বড় বড় হাই তুলছিল, সকাল থেকে বিক্রি খুব একটা হয় নি। চট্টবাবুকে দেখে সে খুশি হয়ে বলে উঠল “আসুন বাবু আসুন, কি দেবো বলুন, আপেল, আঙ্গুর, বেদানা…।”
“না না এসব কিছু না, আমার চাই কলা বেশ কয়েকখানা”
“নিশ্চয় বাবু কলা ১২ টা ২৪ টাকা, কটা দেবো বলুন”
“পুরো জুলুম? হবেনা, ১ কাঁদি নেব, কত তে দেবে বল।”
“১ কাঁদি? সে বাবু আপনি বিবেচনা কোরে যা ভাল বুঝবেন দেবেন।”
শেষমেশ ২০০ টাকায় রফা হল। কলা নিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করলেন চট্টবাবু। কিছুটা পথ যাবার পর হটাৎ দেখেন রাস্তার পাশে একটা প্রকাণ্ড ষাঁড় দাঁড়িয়ে আছে। চট্টবাবু সেটাকে উপেক্ষা করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন কিন্তু হটাৎ দেখেন ষাঁড় বাবাজির চোখ তার কলার কাঁদির দিকে।
চট্টবাবু রাস্তার অন্য দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলেন। কিন্তু তিনি যেদিকে যান ষাঁড় ও সেদিকে যায়। জোরে হাঁটা শুরু করলেন চট্টবাবু, কিন্তু ষাঁড় তো নাছোড় বান্ধা। ঠিক পেছনে পেছনে ধাওয়া করছে। অবশেষে চট্টবাবু ছোটা শুরু করলেন, কিন্তু ষাঁড় বাবাজিও ছেড়ে দেবার পাত্র নয় সেও পেছনে ছুটলো।
প্রায় ১০ মিনিট ধরে ছোটার পর চট্টবাবুর দম ফুরিয়ে এলো, তার হৃদপিণ্ড যেন ফেটে যাবে। ভাবলেন কলার কাঁদি টা দিয়ে দেবেন। তবে কলা বলে কথা, দিয়ে দেবেনই বা কি করে?
হটাৎ চট্টবাবু দেখেন সামনে একটা গাছ, ওনার মাথায় একটা ফন্দি এলো। তিনি ঝড়ের গতিতে গিয়ে গাছে উঠে গেলেন। ষাঁড় বাবাজী আর কিছু করতে পারলো না। চট্টবাবু হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন। কিন্তু হটাৎ শোনেন “cut it” আর সাথে শুনলেন হাততালি।
চট্টবাবু্ তখন পুরো পুরি বিব্রত। বুঝতে পারছেন না কি হল। দেখলেন দুটো লোক ষাঁড় টা কে ধরে নিয়ে গেলো আর একজন এসে তাকে জিজ্ঞাস করলো “এ কী আপনি কে?”
“আমি তো চট্টরুপ চট্টরাজ।……..কিন্তু আপনি কে, আর কি হচ্ছে এগুলো?”
“আমি তরুন চ্যাটার্জি এই সিনেমার পরিচালক, কিন্তু আপনি কোথা থেকে এলেন ……তবে এলেন ভালই করলেন। এত natural acting আমি আগে কখনো দেখি নি। আমার সিনেমাতে অভিনয় করবেন।
What's Your Reaction?

A devoted foodie with keen interest in wild life, music, cinema and travel Somashis has evolved over time . Being an enthusiastic reader he has recently started making occasional contribution to write-ups.
Excellent presentation, full of witty and leaves a joyful experience 😊
Keep it up friend.
Awaiting your next story ☺️