Now Reading
কলকাতার লাইব্রেরী গুলো

কলকাতার লাইব্রেরী গুলো

Avatar photo
লাইব্রেরী

বলাই বাহুল্য বাঙালির বইয়ের প্রতি এক অসাধারণ আকর্ষণ। তাই বোধহয় কলকাতা বইমেলা এতটাই জনপ্রিয়। শহর জুড়ে বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেছে বাঙালি। আর সেই নিয়েই এই প্রবন্ধ রইলো পাঠকদের জন্য।

সারা পৃথিবীতে সবাই জানে কলকাতা বা বাঙালির বই প্রেমের কথা। কলকাতা বইমেলা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় প্রতি বছর বাঙালি বইপ্রেমীর সংখ্যা। আপনি কোন বছর বইমেলা প্রাঙ্গনে ঘুরে দেখুন, সবাই বাঙালি। শুধু কলকাতার নয়, কলকাতা শহরতলী ছাড়িয়ে অন্য রাজ্য। এমনকি অন্য দেশ থেকে আসা বাঙালি। বাঙালি হয়ে এ ব্যাপারে গর্বে বুকের ছাতি ছাপ্পান্ন ইঞ্চি ছাড়িয়ে যায়।

আরাম করে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা বই পড়ে ক্লান্তি বোধ না করা-বাঙালি পারে। আদ্যোপান্ত বাঙালির জন্য প্রায় দু দশক দশে ধরে দেশের সংস্কৃতির পিঠস্থান কলকাতায় তৈরি হয়েছে লাইব্রেরী বা গ্রন্থাগার। আধুনিক প্রযুক্তির গুঁতোয় এবং নব্য বাঙ্গালির অবাঙালিদের অনুকরণের প্রবণতায় কিছু গ্রন্থাগার বন্ধ হয়ে গেছে সন্দেহ নেই। তারপরও যেগুলো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে সেগুলো বইপ্রেমীদের কাছে পিঠস্থান বা তীর্থক্ষেত্র।
কলকাতার পার্ক স্ট্রিট এর মুখে এশিয়াটিক সোসাইটি ১৭৮৪ সালে স্যার উইলিয়াম জোন্স প্রতিষ্ঠা করেন। বহুমূল্যবান এবং দুষ্প্রাপ্য পুঁথির সম্ভারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের হাত ধরে ১৯২৫ সালে বেঙ্গল লাইব্রেরী । যার বর্তমান নাম বঙ্গীয় গ্রন্থাগার পরিষদ। বইয়ের সংখ্যা প্রচুর। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতিতে এই লাইব্রেরীর উদ্বোধন।
ইম্পেরিয়াল লাইব্রেরী এর কথা না বললেই নয় ১৮৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থাগার। ১৯১০ সালে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ইম্পেরিয়াল লাইব্রেরীর সভাপতি নিযুক্ত হন। নিজের সংগ্রহে থাকা প্রায় ৮০ হাজার বই এই প্রতিষ্ঠানকে দান করেন, যেগুলি একটি বিশেষ বিভাগে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছিল। স্বাধীনতার পর এর নাম বদল করে রাখা হয় ন্যাশনাল লাইব্রেরী। তৎকালীন বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নরের বাসভবন ছিল এটি। বইয়ের সংখ্যা প্রায় ২৩ লক্ষ। ১৫ টি ভারতীয় ভাষার বিভিন্ন বই এবং ৮০ হাজার ম্যাপ এখানে আছে।
ন্যাশনাল লাইব্রেরী
ন্যাশনাল লাইব্রেরী
সৌভাগ্যক্রমে ন্যাশনাল লাইব্রেরি রিডিং রুমে নিয়মিত যাতায়াতের সুযোগ হয়েছিল। এত বইয়ের সম্ভার যে, কোনো বই রিকুইজিশন দিলে কমপক্ষে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হতো। কাঠের মেঝের বিশাল রিডিংরুমে বহু জ্ঞানীগুণী ব্যক্তির আনাগোনা দেখেছি। পিন পতনের নিস্তব্ধতার মধ্য দিয়ে আপনি অধ্যায়ন করতে পারবেন।
ন্যাশনাল লাইব্রেরি রিডিং রুম
ন্যাশনাল লাইব্রেরি রিডিং রুম
গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশন লাইব্রেরি। ১৯৪১ সালে ডক্টর বারিদ বরণ মুখোপাধ্যায় ৩৩ হাজার বই দান করেন এখানে। ওয়েলিংটন স্কোয়ার, রসা রোড এবং শেষমেষ গোলপার্ক – এটাই বর্তমান ঠিকানা। গ্রন্থাকারে মোট বইয়ের সংখ্যা ২ লক্ষ ৬০ হাজার। এছাড়াও বর্তমান প্রযুক্তির সাহায্যে ই-বুক, জার্নাল ইত্যাদির সম্ভার উল্লেখযোগ্য। এখানের বিরাট রিডিংরুমে বসে বই পড়ার আনন্দ একেবারে অন্যরকম।
পাড়ায় পাড়ায় গ্রন্থাগারের সংখ্যা কিছু কম নয়। কলকাতার বুকে ছোট এবং ক্ষুদ্র গ্রন্থাগারের সংখ্যা নয় নয় করে একশো ছাপিয়ে যাবে। এছাড়াও বহু মানুষ আছেন যাদের ব্যক্তিগত সংগ্রহ পাঁচশ থেকে হাজার বই।
দেশের আর কোন জাতির মধ্যে এইরকম বই পড়ার নেশা দেখা যায় না। এখনও বাংলায় বর্তমান, দেশ, আনন্দলোক, শুকতারা, নবকল্লোল, স্বাস্থ্য, ভ্রমণ, সফর-এরকম বহু পত্রিকা বহুদিন ধরে নিয়মিত প্রকাশ হয়।
শুনতে খারাপ লাগলেও বহু বাঙালি বাবা-মা নিজের সন্তানকে সাহেব বানানোর প্রাণপণ প্রচেষ্টা করেন। “আমার বাচ্চার বাংলাটা জাস্ট আসে না” বলে গর্ববোধ করে নিজেকে ভূলুণ্ঠিত করেন। অনুসরণ করা ভালো, অনুকরণ নয়। অন্য কোন ভাষাভাষীর মানুষ নিজের ভাষাকে ছোট করেন না। ফেসবুক স্ট্যাটাস দিতে গিয়ে ইংরেজি বর্ণমালায় হিন্দি লিখে সুকুমার রায়ের ‘ট্যাঁশগরু’র দশা করে ফেলেছেন। অনেকটা অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের মতন। যাঁরা নিজেদের সাহেব ভাবেন অথচ সাহেব নন। আবার সাহেবরা ওদের পাত্তা দেন না-এক ‘বকচ্ছপ’ দশা।
কালের চাপে বই পড়া বা পড়ুয়ার সংখ্যা কমছে, জানিনা শেষ কোথায় হবে অ্যামাজন না ফ্লিপকার্ট। শুধু ঘরে বসে কিনে যাও থেকে আবার কবে বেরিয়ে একটু সময় বইয়ের জন্য দেবে! শুধু সাজ পোশাক নয়, দরকার মনের বিকাশ। তাই বই পড়া, তাই গ্রন্থাগার
What's Your Reaction?
Excited
1
Happy
3
In Love
0
Not Sure
0
Silly
0
View Comments (0)

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Scroll To Top