“এক মগ চা” – হেঁকুর বিপদ!!



Saptarshi, a finance professional, has a camaraderie with his camera…
চায়ের উপকারিতা আমরা সবাই জানি । কিন্তু চায়ের নতুন ধরনের ব্যবহার জেনে নিন এই গল্পে সপ্তর্ষির কলমে।
প্রাতকৃত্য নিয়ে হেঁকু সারা জীবন টেনশনে কাটালো। কোথাও সকালে উঠে যাবার নামেই তার জ্বর আসে। কেউ হয় তো বললো, “হেঁকু, এতটার সময় বেরোতে হবে, পারবি তো ? ”
প্রথমেই মৃদু প্রতিবাদ, তারপর বিড় বিড় করে আপন মনে কি সব সংখ্যা আউরে নেওয়া, তারপরই বিমর্ষ মুখে সে বলবে , “ না রে, এত সকালে পারবো কি করে, আমার তো হবে না” ।
নিষ্পাপ মনের অধিকারী হেকুঁর এই শব্দ চয়নের যা মানে করবেন, তা হলো ওতো সকালে বুঝি হেকুঁর বেরুনো হবে না। কিন্তু আসলে এই আপাত সরল বাক্যর পিছনে লুকিয়ে আছে এক সাংকেতিক সন্দেশ যা খোলসা না করা ছিল হেকুঁর সহজাত প্রবৃত্তি। পরের দিকে আমরা বুঝে গিয়েছিলাম এই ‘ আমার তো হবে না’ এর অন্তর্নিহিত অর্থ! বড়ো দুশ্চিন্তা ছিল হেঁকুর তার পেট এর অবাধ্য পনার জন্য। সারাক্ষণ এই ওষুধ সেই ওষুধ খায় সে। বাথরুম থেকে বেরিয়ে মুখ তার বিমর্ষ, “না ঠিক হলো নারে, পেট কেমন যেনো ভার ভার লাগছে, মনে হয় আরো হবে…” ।
একবার পাড়ার রতু ডাক্তার কে দেখাতে গেলো হেকু। খুব আশা নিয়েই গেলো, সকাল বিকেল হওয়া না হওয়ার দোল চাল থেকে মুক্তির উপায় খুঁজতে। এ কথা সে কথার পর রতু ডাক্তার জিজ্ঞেস করলে,” তোর আসল সমস্যা টা কি একটু পরিষ্কার কইরা
কইবি?”
বুক চিরে বেরুল হেকুর কষ্ট ” ডাক্তার বাবু পায়খানা পরিষ্কার হয় না আমার….”!
রতু ডাক্তার সবে মাত্র প্রেসক্রিপশন প্যাডে দুটো আঁচড় কেটেছেন, হেঁকুর প্রশ্নে থমকে গেলো তার হাত। চোখ বন্ধ করে জবাব দিলেন “ঐ টা নোংরা জিনিস ,পরিষ্কার হইবো কি কইরা …নিচের জিনিস নিচেই রাখ , মাথায় তুইল্যা মাথা খারাপ কইরা কি লাভ??”
খুব খুশি হতে পারে নি হেঁকু ডাক্তারের এই জবাবে। মন তার ভেঙে গেছিলো। আস্তে আস্তে হেঁকু মেনেই নিয়েছিল তার এই হতাশা। এর মধ্যেও যে যা টোটকা বলে, সে একবার অন্তত পরখ করে বা চেখে দেখতে ছারে না। সকাল সকাল সে দরজার অন্তরালে অকুস্থলে বসে, গালে হাত দিয়ে ভাবে , আপিসে যেতে দেরি হতে থাকে, সেও আরেক অশান্তি। এরকম একটা সময়ে হেঁকুর সাতাশি বছরের দিদু একদিন শিশুসুলভ আবদারে বলে বসলেন তিনি কাটিহারে তাঁর ছোট ভাই এর বাড়িতে গিয়ে কিছু দিন থাকতে চান। হেঁকু ছাড়া তাকে আর কে ই বা নিয়ে যাবে সেখানে। আপিস ছুটি করে দিদুকে সংগে নিয়ে হেঁকু চেপে বসল রেল গাড়ি তে। সে সময় কলকাতা থেকে দার্জিলিং মেল চড়ে যেতে হত। মালদা থেকে, কাটিহার বা ঐ দিকের কোনো ট্রেন এ জুড়ে দেওয়া হতো কলকাতার যাত্রীসহ একটা বগি কে। দার্জিলিং মেল থেকে ছাড়া ছাড়ি হবার পর ঐ বগিটা হয়ে পড়ত পিতৃমাতৃহীন। জল নেই, পাখা বন্ধ, ট্রেনের ল্যাজে লটকানো বগিতে ফেরিওয়ালা আসে না , সে এক অদ্ভুত পরিস্থিতি। সকাল থেকেই হেঁকুর দুশ্চিন্তা, আজ কি হবে । নয় নয় করে আগের রাতের খ্যাটন টা খারাপ হয় নি। কিন্তু এমনি দিন বাড়িতেই তার জন্য এত সাধ্য সাধনা। ট্রেনের ভিতর যে কি হবে!!! কিন্তু সেদিন একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটলো হেঁকু র জীবনে। হরিশ্চন্দ্রপুর আসতে চলেছে, স্টিম ইঞ্জিন টা ছেড়েছে কান ফাটানো একটা হুইসিল, দিদু সবে এক মুঠো মুড়ি নিয়ে সেটা কে মুখে দেবার জন্য শীর্ণ হাত খানা ওপর করেছে… হেঁকুর পেট বিচ্ছিরি ভাবে মোচড় দিলো। পেট চেপে দৌড় দিল সে বাথরুম পানে। কোনোরকমে বাথরুম এ সেধিয়ে হেঁকু তড়িঘড়ি উপবিষ্ট হয় সিংহাসনে। দরজার ওদিকে শুরু হয় তখন এক ঝলক উষ্ণ আন্দোলন। হেঁকু ওই পুতিগন্ধময় পরিবেশেও বেশ একটা আরাম বোধ করল। ততক্ষণে ট্রেন হরিশচন্দ্রপুর ঢুকেছে। রেল কোম্পানির লোহার চাপা কলের নিচে মগ খানা ধরে জল ভরতে গিয়ে হেঁকু এবার হাহাকার করে ওঠে। না, দুই বিন্দু জলের পর আর কিছু পায় না সে। ভাগ্যের কি নিঠুর পরিহাস। আজও হেঁকুর কপালে হাত পড়ে। অন্যদিনের মত সে আজ ও বসে থাকে অপেক্ষায়। তবে আজ প্রয়োজন জলের।
বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে তার চোখে মুখে। হেঁকু খালি মগের পিছনে ইতস্তত টোকা মারে। গপ্পো টা যখন পরে বলেছিল হেঁকু, তখন এই জাগাটায় এসে ও কেমন উদাস হয়ে যেত। ” কি করলি “, “কি ভাবে করলি” এমন কিছু প্রশ্ন করা হলে হেঁকু মৃদু হাসি টেনে বলতো ” বুজলি রে তিনি আছেন।”
এখানেও হেঁয়ালি। আমরা ভাবতাম বুঝি ভগবানের কথা বলছে হেঁকু। পরে বুঝেছি সেই মুহূর্তে হয়ত বা তিনি ভগবান ই স্বরূপ হেঁকুর কাছে। তিনি আর কেউ নন, একজন চা ওলা। সবে ট্রেনে উঠে কেটলি টা নামিয়েছে সে বাথরুমের কাছে। হাঁক পেরেছে “গরম চা”। আর দেরি করেনি হেঁকু, মগ খানা বাড়িয়ে ধরে বলেছে “এক মগ চা দিজিয়ে, নিকালকে পইসা দেগা !!”
ওতো বড়ো একটা মগে অত চা কেনো কেউ বাথরুম এ বসে খাবে, এ নিয়ে সেই চাওলার খুব একটা মাথা ব্যাথা ছিলনা। এমনও হতে পারে হেঁকুর সেই হাত ধরেই সেদিন তার বউনি হয়েছিল| এর পরের ঘটনা ছোট্ট। প্রায় আধ ঘন্টার চেষ্টায়, ফু দিয়ে হেঁকু সেই ধুমায়িত তরল কে ঠাণ্ডা করে বাগে আনতে পারে এবং তার যথাযত ব্যবহার করে সে মুক্তি পায় মুক্তকচ্ছ হওয়া থেকে|
What's Your Reaction?

Saptarshi, a finance professional, has a camaraderie with his camera and pen as he tries to capture the wonderful light and sight along his way and write about the world and people around him.