আমার হারিয়ে যাওয়া ছেলেবেলা – পর্ব ২
Raj Kumar Mukherjee - sexagenarian. A father, a husband and…
এই পর্বে যে ছেলেবেলার দুষ্টুমি গুলোর উল্লেখ আছে তা আপনাকে আপনার শৈশবে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য। পড়ে দেখুন।
লেখক : রাজ কুমার মুখার্জি
ভাগ – ২
গোপাল অতি সুবোধ বালক
গোপাল অতি সুবোধ বালক। গোপাল কখনও কথার অমান্য করে না। গোপাল সর্বদা পিতা মাতার কথা শুনিয়া চলে।
আমি হলাম সেই গোপাল। তাহলে শুনি কি রকম সেই সুবোধ গোপাল। আমি নামক গোপাল যে কোন কালেই সুবোধ ছিলাম না সেটা বিশ্ব শুদ্ধ লোকে জানত কেবল আমার ধারণা ছিল অন্য রকম। আমি ভাবতাম আমি আসলে ভালো, সবাই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। আমায় খারাপ বলে।
খুব ছোট বয়স থেকেই পাজি বদমাইশ ছিলাম। লেখাপড়া বাদ দিয়ে অন্য সব কিছুতে আমার কখনও উদ্যোগে ভাটা পড়তে দিই নি। ইস্কুলে আমার মত ছাত্রের ঠেলায় শিক্ষকের প্রাণ ওষ্ঠাগত ছিল।
তখন ক্লাস এইট, টিফিনের আগের পিরিয়ড, শৈলেন বাবু অঙ্ক করাচ্ছেন আর দুই সারির বেঞ্চের মধ্যে দিয়ে পায়চারি করছেন। আমি বরাবর শেষ বেঞ্চের প্যাসেজ সাইডে বসতাম। অঙ্ক কষা ছেড়ে আমি তখন পাশের প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে কাটাকুটি খেলতে ব্যস্ত। স্যার দুচার ঘা লাগিয়ে সবে ফিরেছেন, পেনের খাপ খুলে স্যারের সাদা জামায় উপর থেকে নীচ অবধি সুলেখা কালির ঝর্ণার ধারা। ক্লাস শেষ, টিফিন পিরিয়ডে টিচার রুমে অন্য স্যারেরা শৈলেন বাবুকে জামায় কি করে দাগ লাগলো জানতে চাইলেন। স্যার তো টেরই পান নি। অন্য স্যারেরা জিজ্ঞেস করলেন শেষ ক্লাসটা কোন ক্লাস। স্যার বললেন – এইট ডি। সমবেত সঙ্গীতের মত সবাই বলে উঠলেন “ডাকুন রাজকুমারকে”। যথারীতি ডাক পড়ল। প্রথমে ধমক, তারপর চড় চাপড় শেষে বেত্রাঘাত। সব স্বীকার করলাম। গার্জেন কল হলো। বাবা ব্যস্ত মানুষ আসতে পারবেন না। পরদিন মা হাজির প্রধান শিক্ষকের ঘরে। আমার ডাক পড়ল। মা বললেন, বাঁদর ছেলে, আরও মারবেন – আমি যেন বালির বস্তা, যে পারবে পেটাবে। এককিস্তি মার তখন হলো, শেষ কিস্তি হলো বাড়ি ফিরে এসে।
আমি পড়তাম ভবানীপুর মিত্র ইনস্টিটিউশনে। ফুটবলটা মোটামুটি খেলতাম। স্বপ্ন ছিল সুরজিৎ সেনগুপ্তর মত রাইট আউট হব। নিয়মিত স্কুলটিম খেলতাম। এছাড়া আশপাশের পাড়ায় খেপ খেলতাম দক্ষিণা বাবদ ঘুগনি পাউরুটি কলা ডিম সিদ্ধ। তো যেদিন খেলা থাকত তার আগের দিন ড্রিল স্যার বলে দিতেন। পরদিন খেলার সরঞ্জাম – ফুটবল বুট, শর্টস, হোস নিয়ে স্কুল যেতাম। টিফিনের পর খোগেন দা (আমাদের ইস্কুলের দারোয়ান) ক্লাস থেকে ডেকে নিয়ে যেত। সুতরাং টিফিনের পরের পিরিয়ডের পর থেকে মানে 4th পিরিয়ড থেকে কোন পিরিয়ডের পড়া করে আসা তো দূর, বই পর্যন্ত আনতাম না।
একবার টিফিনের পরের পিরিয়ড, সুশীল বাবুর ক্লাস, ভীষণ রাগী, ইতিহাস পড়াতেন। পড়া না পারলে ডাস্টার পেটা। সেদিন আবার খেলা। এক এক করে পড়া ধরছেন, আমার পালা প্রায় এসে যায় আর কি। এদিকে খগেন দার দেখা নেই। সুনীল বাবু আমায় দাঁড় করিয়ে খুব মোলায়েম করে বললেন — “ভালো ছেলে” – একটা প্রশ্ন করলেন। আমার সব শেষ। কি প্রশ্ন, কোথা থেকে প্রশ্ন, কিছুই বুঝতে পারছি না। আমি বললাম ” স্যার, প্রশ্নটা আর একবার বলবেন”। স্যার টেবিল থেকে ডাস্টার নিয়ে এলেন। প্রশ্নটা আবার বললেন। আমি চুপ। স্যার বললেন
— কাল সন্ধ্যায় বাড়িতে লোক এসেছিল?
ওহ হাতে স্বর্গ পেলাম, অজুহাতের স্বর্গ। বললাম
— হ্যাঁ স্যার, হ্যাঁ!
— আজ সকালে মা বললেন যাও বাবা বাজারটা করে নিয়ে এসো?
(ওহ ঠাকুর সাথে আছেন)
— হ্যাঁ স্যার।
— বাজার আনার পর মা বললেন, আজ রেশন তোলার শেষ দিন, রেশনটা আনতেই হবে। কি তাই তো?
— হ্যাঁ স্যার
— বুঝলাম। এতকিছু করতে পারো অথচ পড়াটা তৈরী করে আসতে পারো না। এই বলেই সপাটে এক চড়।
নাটকের ছন্দ পতন। দ্বাররক্ষী খগেন দার প্রবেশ।
— স্যার এইটা দেখুন। একটা স্লিপ। আমার নাম, ক্লাস, সেকশন লেখা। স্কুল টীমের প্লেয়ার। আজ খেলা আছে। ছুটি দিতে হবে। স্কুলের সম্মান রক্ষার্থে আমার স্কুল টিমে যোগদান আবশ্যক।
দশচক্রে ভগবান ভুত। এক চড়েই আপাতত আমার ধোলাই পালা শেষ ব্যাগ গুছিয়ে খগেন দার সঙ্গে চললাম খেলতে। খেলায় জিতলে ড্রিল স্যার মোগলাই পরোটা খাওয়াতেন। খাওয়া হলে বিবেকানন্দ পার্ক থেকে বাস ধরে বাড়ি ফেরা।
এ আমার ক্লাস এইটের দু একটা নমুনা মাত্র। আমিই সেই গোপাল চরিত্রের “রাজকুমার”, অতি সুবোধ বালক।
কি? কিরকম লাগলো? কে ভালো – গোপাল না রাজকুমার ?
What's Your Reaction?
Raj Kumar Mukherjee - sexagenarian. A father, a husband and a son, who has finally let go of excelsheets and PowerPoints and picked up a pen instead. A child at heart, he reminisces his childhood days and wishes that the world was a better place for all of us. An avid reader and storyteller at heart, he is spending his retirement by reading books, experimental cooking (mostly failures!) and writing.
Spellbound….I was different…never had the bashings because of study but because of my innocent playfulness causing discomfort to others