Now Reading
আমার কিশোরবেলার আবহাওয়া পর্ব – ৪

আমার কিশোরবেলার আবহাওয়া পর্ব – ৪

Avatar photo
নোনাদা আবহাওয়া তে গালাগালির বন্যা বইয়ে দিত

কিছু লোক কে বিশেষ কিছু বললে চট করে রেগে যায়। কেন রেগে যায় তার কোন যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা নেই। ছোটরা সেই কথাটাই বারবার বলে লোকটাকে বিরক্ত করে এবং তাকে রাগিয়ে তাদের মজা। এইরকম দুষ্টুমি বোধহয় ছোটবেলায় সবাই করে। সেই রকম মজার কথা শুনি আজ রাজকুমার মুখার্জির কলমে।

কিশোর বেলার চতুর্থ পর্ব লিখতে বসে, প্রথম, দ্বিতীয় তৃতীয় পর্বের সেই শব্দ – আবহাওয়া, তার অবতারণা করতেই হচ্ছে। তখন বয়স ছিল সতেরো, আবহাওয়া ছিল কৈশোরের। এখন ষাট পেরিয়ে একষট্টি, আবহাওয়া বার্ধক্যের। সেই বদমাইশির আবহাওয়া বড় হচ্ছি। আসুন আজ সেই রকম একটা গল্প করা যাক।

ওই বয়সে লোকের পেছনে লাগার একটা আলাদা রকম মজা থাকে। কাউকে “পচাদার পায়ে গু”, কাউকে “দাদুর বাড়ি দু মণ ছোলা” – এসব বললে খুব রেগে যেত। তবে এদের মধ্যে অন্যতম ছিল নোনাদা। আজ সেই নোনাদার গল্প করি।

আমাদের পাড়াতে থাকতো নোয়াখালীর নোনাদা, ব্রাহ্মণ সন্তান, গলায় মোটা উপবিত, খ্যানখ্যানে গলা, মস্তিষ্কের ভারসাম্যের সামান্য অসুবিধা, সুচিবাইগ্রস্থ। দিনের মধ্যে একশ বার হাত ধুয়ে ধুয়ে হাত সাদা করে ফেলেছে। তখনো কোভিড বা করোনার কথা কেউ শুনিনি বা জানি না। নোনাদার আদি বাড়ি ছিল বাংলাদেশের নোয়াখালী। নোনাদাকে কেউ ‘নোয়াখালী’ বললে ভীষণ রেগে যেত এবং তাকে গালমন্দ করতো। কালের চক্রে “নোয়াখালীর” নোয়া বাদ পড়ে শুধু খালি রয়ে গেল। এখন আর ‘নোয়াখালী’ বলতে হয় না শুধু ‘খালি’ বললেই রেগে যায়। এ হেন নোনাদা মিনিবাসের অচেনা হেল্পার কেও গালমন্দ করেছে। কারণ মিনিবাসের হেল্পার, যেরকম ভাবে ডাকে, “খালি গাড়ি, খালি গাড়ি” — নোনাদা রাস্তার ফুটপাত থেকে তাকে গালমন্দ করেছে।

নোনাদা, আমাকে এড়িয়ে চলে। আমার সামনাসামনি হলে, আমি চটি খুলে রাস্তায় খালি পায়ে দাঁড়িয়ে ইশারায় খালি চটি দেখাতাম। নোনাদা উত্তেজিত এবং গালাগালির বন্যা বয়ে যেত, কথায় নোয়াখালী টান থাকতো।

একদিন সকালে বাজার যাচ্ছি, বাজারের পয়সা সরিয়ে, সুরেন বিড়ি থেকে একটা সিগারেট ধরিয়ে রাস্তা পার হব। দেখি খ্যানখ্যানে গলায় নোনাদা কাউকে খুব গালাগাল দিচ্ছে। কিন্তু কাকে দিচ্ছে বোঝা যাচ্ছে না; কারণ অনেকে দাঁড়িয়ে হাঁ করে দেখছে আর ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করছে। আমি খুব মোলায়েম করে বললাম “নোনাদা কি হয়েছে?” নোনাদা আমায় খ্যানখ্যানে গলায় বলল “পুতু, দেখো না গুখেকোর ব্যাটারা আমার পেছনে লেগেছে।” আমি আরো নরম করে বললাম “তুমি ছাড়ো তো ওসব, বাড়ি চলে যাও, সকালবেলা ‘খালি, খালি’ গালাগাল দিয়ে কি হবে? ব্যাস, নোয়াখালীর নোনাদা নিজের রূপ ধরল। ওদের ছেড়ে দিয়ে এবার আমার গুষ্টি উদ্ধার করতে শুরু করল গালাগাল দিয়ে। আমি ওদিকে মাথা না ঘামিয়ে, বাজার চলে গেলাম। রাস্তায় যারা মজা দেখছিল, তাদের আরো মজা, হো হো করে হাসতে শুরু করলো।

See Also
The interview

আমার স্ত্রী, আমার খুব ছোটবেলার বন্ধু। সে আমার এসব কীর্তি কলাপ জানতো। আমাদের বিয়ের পর, প্রথম দুজনে বেরিয়েছে, সামনে দিয়ে নোনাদা আসছে। আমার স্ত্রী আমার হাত চেপে ধরে বলল “আমি কিন্তু সঙ্গে আছি।” বলি বলি করেও নোনাদা কে ‘খালি’ বলা হলো না। সেই যে বলা বন্ধ হল, তারপর থেকে আর কোনদিন বলিনি। রাস্তায় অনেক বার নোনাদার মুখোমুখি হয়েছি। পাস কাটিয়ে চলে গেছি। কি জানি, কেন যে বলতে পারিনি। তা আজও বুঝে উঠতে পারলাম না।

নোয়াখালীর নোনাদার অন্তত একজনের থেকে মুক্তি। এই ভাবেই কেটে গেল কৈশোর, পড়াশোনা তো অনেক আগেই লাটে উঠেছে। বার্ধক্যের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে ফেলে আসা দিনের কথা ভাবলে মজা লাগে আবার খারাপ লাগে। কেন যে সময়টা হেলায় নষ্ট করলাম? দূর, অত দার্শনিক হয়ে কি হবে? একজন নোনাদা গেছে, তো কি হয়েছে? Event কি কিছু কম? পরদিন না হয় সেই সব Event এর গল্প করা যাবে।

What's Your Reaction?
Excited
0
Happy
0
In Love
0
Not Sure
0
Silly
0
View Comments (0)

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Scroll To Top