আড্ডা টা আজও আছে


আড্ডা নামক বস্তুটি বাঙালির রন্ধ্রে রন্ধ্রে বহুদিন ধরে অবস্থিত। কিন্তু আজকের দিনে দাঁড়িয়ে সেই আড্ডাটা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। তবে ২২ শে মার্চ এমনটা হলো না। কি ঘটলো সেদিন? জানতে হলে পড়তে হবে।
কফি হাউজের আড্ডাটা আজ আর নেই। সত্যি এই সময় দাঁড়িয়ে কর্মব্যস্ততার মধ্যে বাঙালি হয়তো আগের মত আড্ডা দিতে পারে না। আড্ডার কথা বলতে মনে পড়ে যায় মানিক বাবুর “আগন্তুক” সিনেমার সেই বিখ্যাত দৃশ্য। রবি ঘোষ ওরফে রঞ্জন রক্ষিত বললেন আড্ডা মেড ইন বেঙ্গল … অপরদিকে উৎপল দত্ত ওরফে মনমোহন মিত্র আড্ডা নিয়ে তার বক্তব্য পেশ করলেন, বললেন- আড্ডা মানে পরনিন্দা পরচর্চা নয়, মুখেনং মারিতং জগত্ নয়, প্রোডাক্টিভ ডিসকাশন দরকার.. তো সেই আড্ডাই যখন নেই প্রোডাক্টিভ আড্ডা আর কোথা থেকে থাকবে..।
তবে সেদিন বিকেলে যা ঘটল সেটা দেখলে মানিকবাবু নিশ্চয়ই বলতেন যে বাঙালি এখনও প্রোডাক্টিভ আড্ডা দিতে পারে। ঘটনাটি ঘটে , ২২ শে মার্চ,বিকেল সাড়ে ছটায়। জায়গাটা ছিল রাজডাঙ্গায় অবস্থিত মোহনাতে। চারজন লেখক এর সাথে বসে শিল্পী পার্থ দাশগুপ্ত যা ঘটালেন তা দেখে সত্যিই বলা যায় যে প্রোডাক্টিভ আড্ডা এখনো জীবিত আছে বাঙালির জীবনে।
এক মনোরম আড্ডা অনুষ্ঠিত হল সেদিন সন্ধ্যেবেলা ‘মায়া আর্ট স্পেস’ এ চারজন লেখকের সঙ্গে। উনাদের সকলেরই বই ‘মায়া বুকস্’ থেকে প্রকাশিত হয়েছে এবারের বইমেলায়। বলে রাখা ভালো ‘মায়া আর্ট স্পেসেরই’ আর একটি নতুন সংযোজন এই ‘মায়া বুকস্’।
এই চারজন লেখকের সঙ্গেই কথোপকথনে থাকলেন শিল্পী পার্থ দাশগুপ্ত। এই আড্ডা তে পার্থ বাবুর চেয়ে ভালো আর কেউ হয়তো হতো না কারণ পার্থবাবুই এই চারটে বইয়ের প্রচ্ছদ শিল্পী।

এই চারটে বইয়ের লেখকেরা যথাক্রমে হলেন মৃত্যঞ্জয় চ্যাটার্জী : ‘বিজ্ঞাপনী গল্প‘, বিজ্ঞাপনের নানারকম বিষয় নিয়ে একটি বই। প্রশান্ত দাঁ : ‘সৃজনশীল শিল্পী, উমা সিদ্ধান্ত‘। এখানে লেখক, শিল্পী উমা সিদ্ধান্তর শিল্পী জীবনের নানান দিক তুলে ধরেছেন।’ রূপকথার মতো, স্মৃতিকথায় প্রণতি রায়‘, যাঁর রাজপরিবারে জন্ম, বিয়েও আর এক রাজপরিবারে। তখনকার প্রেক্ষাপটে তাঁর গ্রামে এবং শহরে, কেমন ছিল জীবনযাপন, কেমনই বা ছিল সমাজের চালচিত্র, সেটাই তুলে ধরতে চেয়েছেন লেখক সপ্তর্ষি রায়বর্ধন। এবং সবশেষে লেখক সত্যরূপ সিদ্ধান্ত নিজেই তাঁর জীবনের অভিনব, বিপদসংকুল অথচ রহস্যে মোড়া অভিযানের কথা লিখেছেন তাঁর বই ‘একেই বলে অ্যাডভেঞ্চার‘ এ। আগামী দিনে ‘মায়া বুকস্’ এর কাছ থেকে এমন আরো বিভিন্ন বিষয়ের বই আমরা পাবো, সেই আশা রাখি।
দাঁড়ি টানার আগে ধন্যবাদ জানাতে চাই ‘মায়া আর্ট প্রেস’ এবং ‘মায়া বুকস্’ কে। আশা রাখবো এইরকম আড্ডার অনুষ্ঠান তারা যাতে পুনরায় আয়োজিত করেন। এবং পাঠকদের কাছে অনুরোধ থাকলো বই পড়ুন, বাংলা ভাষার বই পড়ুন এবং নিজেদের জ্ঞানেন্দ্রিয়ের উন্মেষ বাড়ান। আজ এইটুকুই থাক, নমস্কার।